রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ এতটাই নিম্নমানের হয়েছে যে উদ্বোধনের সাড়ে তিন বছরের মধ্যে মসজিদের ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ছে। অন্যদিকে কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। চাপে পড়ে এখন দায়সারাভাবে সে কাজ করছেন ঠিকাদার।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফট জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই মসজিদ নির্মাণের কাজ করেছে।
মসজিদের ইমাম মো. সিগবাতুল্লাহ গতকাল মঙ্গলবার জানান, ২০২১ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের জন্য মসজিদের কাজ শেষ না করেই ফেলে রাখেন এই ঠিকাদার। তারপর টুকটাক কাজ করলেও অসমাপ্ত কাজ তারা শেষ করেননি। এখন মসজিদের দেয়াল ফেটে যাচ্ছে। একপাশ দেবে যাচ্ছে। ভেতরে পানি ঢুকছে।
ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই নির্মাণকাজ করেছে। এর স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গত বছর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফট জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া যায়। দরপত্র অনুযায়ী সেখানে চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ ক্যাটাগরির লিফট। তার বদলে ‘সি’ ক্যাটাগরির লাগানো হয়। এই দুই লিফটের দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। তদন্তের পর এই লিফট ঠিকাদার খুলে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তার পরিবর্তে নতুন লিফট এখনো সরবরাহ করা হয়নি।
এবার গোদাগাড়ী উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ কাজ শেষ না করেই ১০ কোটি টাকার বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। গোদাগাড়ী উপজেলার তৎকালীন ইউএনও গত ২৪ জুন মসজিদের বিভিন্ন সমস্যা ও অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য রাজশাহীর গণপূর্ত বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর চিঠি দেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মসজিদের মিনারের চারপাশের নকশা হালকা বাতাসে ভেঙে পড়ছে, যা থেকে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আপাতত স্থানটির চারপাশে প্রবেশ নিষেধ করে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। মসজিদের সামনের বড় সিঁড়ি হালকা বৃষ্টিতেই বিদ্যুতায়িত হয়ে যাচ্ছে। সিঁড়ির সব কটি লাইট নষ্ট। এতে রাতে মুসল্লিদের মসজিদে আসা–যাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ–সংযোগের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে ভবনের ভেতরে অনবরত পানি পড়ে। নষ্ট ‘এসি’ অসম্পূর্ণভাবে ফিটিং করে গেছেন ঠিকাদার, যা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সুইচগুলো থেকে বিদ্যুৎ শক করছে, ফলে লাইট–ফ্যান চালানো যাচ্ছে না। রেগুলেটরে সমস্যা, প্রায় সব কটিই অকার্যকর। পুরো মসজিদের সব ঝাড়বাতি নষ্ট। অনেক সকেটে বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। সাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা, স্পিকার মিক্সার মেশিন নেই। অ্যামপ্লিফায়ার খুবই নিম্নমানের। মসজিদের সামনের বড় বারান্দার লাইট স্থাপন ভুলভাবে হয়েছে, প্রায় সব লাইট নষ্ট, লাইট লাগানো ফ্রেমগুলো বাতাসেই খুলে পড়েছে।
ঠিকাদার সৈয়দ জাকির হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রায় সব মডেল মসজিদ থেকেই এ রকম সমস্যার অভিযোগ আসছে। তাঁরা ঠিকাদারকে দিয়ে ঠিক করিয়ে নিচ্ছেন।
সুত্রঃ প্রথম আলো