গত ১৫ বছরের রুটিন জীবন থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন হাসিনা। একাকী নিঃসঙ্গ জীবনে দিন দিন তার হতাশা বেড়েই যাচ্ছে। যারা তার সঙ্গে ক্ষণিকের জন্য দেখা সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন তাদের কাছে এমন হতাশার কথাই জানান দিচ্ছেন হাসিনা। প্রয়োজনে জেল জীবনকে মেনে নেবেন তবুও দেশে ফিরতে চান হাসিনা, এমন খবরই ভারতের আনাচে-কানাচে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ভারতে খুব বেশি যে ভালো নেই হাসিনা সেটা আচ করা যাচ্ছে ভারতীয় সমাজ পাতার বয়াতে।
একাকী নিঃসঙ্গ জীবন আর কত ভালো লাগে, ইয়োগা আর বই পড়ে কতটা সময় কাটানো যায়, এ যেন সাজা বিহীন জেল জীবন। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশ ছাড়লেও এখন তার মনে উকি দিচ্ছে নানা কল্পনা। একেতো নেতাকর্মীদের রেখে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তার উপর একের পর এক হত্যা মামলা কি করবেন ভেবে কুল পাচ্ছেন না তিনি। ভারত সরকার ও যে তাকে খুব বেশি মুল্য দিচ্ছে তা না, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুরক্ষায় রাখা হয়েছে তাকে। পালিয়ে যাওয়ার চার মাস হাসিনা ইস্যুতে ভারত ও কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশা নিয়ে বাংলাদেশে ফেরার ভাবনাটি মাথায় বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে বলে ধারণা করছেন ভারতীয় বিশ্লেষকরা।
দেশে ফিরে জেলে থাকতে হলেও দেশে আওয়ামী পন্থীদের ভালবাসা অন্তত পাওয়া যাবে, এমনটাই নাকি ভাবছেন হাসিনা। ভারতে কার্যত হাসিনা যে অবস্থায় আছেন সেটা জেল জীবন থেকে খুব বেশি স্বাধীন নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের জেলে তিনি যে ডিভিশন পেতেন তাতে ভারতের সুযোগ সুবিধার চেয়ে কম কিছু হতো না বরং বাড়তি হিসেবে তিনি নেতাকর্মীরা স্বজনদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিতে পারতেন এমনটাই বলছেন ভারতে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশে ফিরতে চাইলেই কি হাসিনা তা পারবেন?
এখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে, তাদের দলীয় সংগঠন ও ছত্রভঙ্গ। শেখ হাসিনার বয়স আজকের চেয়ে দশটা বছর কম হলে তবু হয়তো মনে করা যেতো তিনি দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন, কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা কর্মীরা এখনো প্রত্যাশা করছেন তাদের নেত্রীর দেশে ফেরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
তবে শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে যে দেশের আতিয়থীয়তায় আছেন তারা কিন্তু এখনই অতটা আগ বাড়িয়ে ভাবতে রাজি নয়। সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা তার কথায় পিচ এখন প্রতিকূল বল উল্টাপাল্টা লাফাচ্ছে এরকম সময় চালিয়ে খেলতে গেলে হিতের বিপরীত হতে পারে। এখন বরং ধৈর্য দেখানোর সময়, ফলে প্রতিপক্ষের সবুজ বলের জন্য অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়। রাজনীতির উইকেটে পোড় খাওয়া বেটার শেখ হাসিনা ও নিশ্চয়ই এটা জানেন এবং সে অনুযায়ী উপযুক্ত সুযোগ হলে তবেই সেটা কাজে লাগাবেন।