অন্যায়ের প্রতিবাদ করা অন্যতম ইবাদত
মুসলিম ঐক্যের মূল বিষয় হলো আল্লাহ, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও কিতাবুল্লাহ। অর্থাৎ এক আল্লাহর প্রতি ইমান বা বিশ্বাস, আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও সম্পূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর কিতাব কোরআন মজিদের পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ।
কোরআন কারিমে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (কোরআন) সম্মিলিতভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামত স্মরণ করো। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তরগুলোতে প্রীতি দিয়েছেন, ফলে তোমরা তার অনুগ্রহে ভ্রাতৃরূপ লাভ করেছ। তোমরা তো জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের প্রান্ত সীমানায় দাঁড়িয়ে ছিলে, তিনি (রাসুল) তা থেকে তোমাদের রক্ষা করলেন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘বিশ্বাসী মুমিনগণ সম্প্রীতি, করুণা ও দয়ার্দ্রতায় যেন এক দেহ এক প্রাণ: যেমন শরীরের একটি অঙ্গে আঘাত পেলে সারা অঙ্গ ব্যথা অনুভব করে, যন্ত্রণায় নির্ঘুম রাত কাটায় ও জ্বরে ঘর্মাক্ত হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম, মুত্তাফাক আলাইহি) ‘প্রকৃত মুসলমান সে ব্যক্তি, যার হাত ও জবান দ্বারা অন্য মুসলমান শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে।’ (বুখারি: ৯-১০)
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর মহান আদর্শ হলো যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করবে, সে ও তৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার জন্য দায়ী হবে। পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়ী করা যাবে না।
‘কেউ কারও পাপের বোঝা বহন করবে না।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৬৪ ও সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ১৫)
যদি কেউ মজলুম হয়, তাহলে সে আত্মরক্ষা করতে পারবে। প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে, কোনো ব্যক্তি তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে না এবং মজলুমকে সবাই সাহায্য করবে। প্রতিবেশীকে নিজের মতোই গণ্য করতে হবে। তার কোনো ক্ষতি বা তার প্রতি কোনো অপরাধ সংঘটন করা যাবে না। কোনো জালিম বা অপরাধীকে সুরক্ষা দেওয়া যাবে না। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
ইসলাম সব সময় শান্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের পক্ষে। কিন্তু কখনো অন্যায়ভাবে আক্রান্ত হলে বা জুলুমের শিকার হলে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের নির্দেশও রয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হলো, যারা আক্রান্ত হয়েছে। কেননা, তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাদের সাহায্য করতে সক্ষম।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৩৯) ‘যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরা আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৯০)
ন্যায় যুদ্ধ ইবাদত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন কারিমে বলেন, ‘তোমাদের কী হলো? তোমরা কেন আল্লাহর পথে লড়াই করো না? আর দুর্বল পুরুষ, অসহায় নারী ও নিরাশ্রয় শিশুরা আল্লাহর কাছে আর্তনাদ করছে—“হে আমাদের রব! আমাদের এই জালিমদের কবল থেকে মুক্তি দিন এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাঠান।”
‘যারা বিশ্বাসী মুমিন তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে আর যারা অবিশ্বাসী কাফির তারা তাগুত (আল্লাহর বিধানের বিরোধী শক্তি) এর পক্ষে লড়াই করে। তোমরা শয়তানের সহযোগীদের নিঃশেষ করে দাও। নিশ্চয় শয়তানের যড়যন্ত্র জাল বড়ই দুর্বল।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৭৬)
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় সারিবদ্ধভাবে।’ (সুরা-৬১ ছফ, আয়াত: ৪) ‘তোমরা তাদের মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখো—এর দ্বারা তোমরা ভীতসন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে ও তোমাদের শত্রুকে এবং এ ছাড়া অন্যদের, যাদের বিষয়ে তোমরা জানো না, আল্লাহ তাদের জানেন। আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৬০)
ন্যায়ের পথের যারা, তাদের বিজয় আল্লাহর সাহায্যে সুনিশ্চিত। কোরআন হাকিমে রয়েছে, ‘আল্লাহর হুকুমে অনেক ক্ষুদ্র দল, বহু বৃহৎ দলের ওপর বিজয় লাভ করেছে; আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৪৯)
লুত সম্প্রদায় সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ‘নিশ্চয় তাদের প্রতিশ্রুত সময় প্রভাতকাল; প্রভাত কি নিকটে নয়?’ (সুরা-১১ হুদ, আয়াত: ৮৭) ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটে, সুসংবাদ দাও মুমিনদের।’ (সুরা-৬১ সফ, আয়াত: ১৩)
অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে যারা জীবন দেয়, তারা অমরত্ব লাভ করে। কোরআন আজিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয়, তোমরা তাদের “মৃত” বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না।’ (সুরা-২ বাকারা: ১৫৪)
মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই এটা পছন্দ করি যে আল্লাহর রাস্তায় (ন্যায়ের পথে) শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই।’ (বুখারি: ৩৫)