বগুড়া প্রতিনিধি
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুস বরাবর একটি খোলা চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশ ট্র্যাভেল এজেন্সি
অ্যাসোসিয়েশন (বিটিইএ) এর চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে চিঠিটি প্রকাশ
করেন।
চিঠিতে বিশ্বব্যাপী শ্রম সংকটের চিত্র তুলে ধরে বিটিইএ চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের
বিভিন্ন খাতে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন শ্রমিকের ঘাটতি তৈরি হবে। এই সংকট স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি, নির্মাণ, উৎপাদন এবং পর্যটন খাতকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত
করবে।
শ্রম সংকটের প্রধান কারণ:
১. বৃদ্ধ জনসংখ্যা: উন্নত দেশগুলোতে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমছে।
২. দক্ষতার ঘাটতি: প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিবর্তনে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশ্বব্যাপী চাহিদার খাতসমূহ:
স্বাস্থ্য খাত: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী ১৫ মিলিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি রয়েছে।
প্রযুক্তি খাত: ডিজিটাল রূপান্তর, AI এবং সাইবার সিকিউরিটি খাতে ৪.৩ মিলিয়ন দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন।
নির্মাণ খাত: বৈশ্বিক নির্মাণ খাতে ৫ মিলিয়ন শ্রমিকের অভাব।
উৎপাদন ও পর্যটন খাত: পর্যটন খাতে প্রায় ১.৯ মিলিয়ন শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিক সংকট:
উত্তর আমেরিকা: যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় স্বাস্থ্যসেবা ও নির্মাণ খাতে শ্রমিকের অভাব।
ইউরোপ: জার্মানি সহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ১২ মিলিয়ন শ্রমিকের প্রয়োজন।
মধ্যপ্রাচ্য: সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নির্মাণ ও স্বাস্থ্য খাতে বড় ঘাটতি।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা:
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যুবশক্তি বিশ্ব শ্রমবাজারে শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিবছর গড়ে ২২ লাখ কর্মক্ষম
তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, যাদের মধ্যে ১৫-১৬ লাখ বেকারত্বের শিকার। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই বিশাল যুবশক্তিকে কাজে লাগানো সম্ভব।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপ:
১. কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি: প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতসহ প্রাসঙ্গিক খাতগুলোতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা।
২. ভাষাগত দক্ষতা: ইংরেজি, জার্মান, জাপানি, চাইনিজসহ প্রয়োজনীয় ভাষা শেখানোর উদ্যোগ।
3. দ্বিপাক্ষিক চুক্তি: শ্রমিক সংকটপ্রবণ দেশগুলোর সঙ্গে শ্রম চুক্তি করা।
4. তথ্যভাণ্ডার গঠন: জাতীয় শ্রম শক্তি ডাটাবেজ তৈরি।
চিঠির শেষে বিটিইএ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর উল্লেখ করেন, “যদি যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এটি শুধু দেশের বেকারত্ব
হ্রাস করবে না বরং বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করবে।"
তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে, এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখবে।