টানা ১০ দিন রাস্তায় ইবতেদায়ি শিক্ষকরা, কষ্টে গেল আরও একটি রাত
রাজধানীতে জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি করেছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। শীতের রাতে রাস্তায় পাতলা চট বিছিয়ে নিদারুণ কষ্টে আরও একটি রাত পার করলেন তারা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর-সংলগ্ন এলাকার একপাশে রাস্তায় অবস্থান করতে দেখা যায় ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, জাতীয়করণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঢাকার রাজপথ ছাড়বেন না। প্রয়োজনে অনাহারে মরতেও প্রস্তুত তারা। তবুও দাবি আদায় না করে বাড়ি ফিরবেন না।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এক শিক্ষক বলেন, আমরা আগেও জাতীয়করণের দাবি নিয়ে বহুবার আন্দোলন করেছি। মাদরাসার শিক্ষক, মাথায় টুপি, মুখে দাড়ি দেখে সরকার আমাদের গণহারে জামায়াত ট্যাগ দিয়ে হটিয়ে দিততো। এখন আমাদের সন্তান, নাতি-পুতিদের রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে তারাও আমাদের সঙ্গে একই আচরণ করছে। নির্মমভাবে লাঠিপেটাও করেছে পুলিশ।
তিনি বলেন, যতই নির্যাতন-নিপীড়ন করা হোক না কেন, আমরা দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরছি না।
[caption id="attachment_3366" align="aligncenter" width="517"] ছবি সংগৃহীত[/caption]
এদিকে, সোমবার (২৭ জানুয়ারি) নবম দিনে ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে দাবি না মানলে মঙ্গলবার দুপুরের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।
সোমবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর-সংলগ্ন এলাকায় শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের পক্ষে এ আলটিমেটাম ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, অসহায় শিক্ষকদের ওপর টিয়ার গ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেড কেন? ৫ আগস্টের পর টিয়ার গ্যাসের কবর দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসে ব্যাখ্যা দেবেন, কেন এ লাঠিচার্জ করা হলো। এটা না করলে শাহবাগ থানা ঘেরাও করা হবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সচিবালয় ঘেরাও করা হবে।
[caption id="attachment_3367" align="aligncenter" width="522"] ছবি সংগৃহীত[/caption]
অধ্যাপক রুহুল আমিন আরও বলেন, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টা কি এ লাঠিপেটার দৃশ্য দেখেননি? পুলিশ কীভাবে এ লাঠিচার্জ করে?
আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা আব্দুল হান্নান হোসেন বলেন, রোববার (২৬ জানুয়ারি) সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি টিম আমাদের সঙ্গে দেখা করেছিল। সোমবার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হবে বলে শুনেছিলাম। সেখান থেকে একটি ভালো সিদ্ধান্ত আসার কথা ছিল। তবে স্পষ্ট কোনো বার্তা আমরা পাইনি। আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছি। যদি মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সুরাহা না করে, তাহলে সামনে আরও বড় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
আরেক সংগঠক এজাজ কায়সার বলেন, অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। আমরা আশা করছি, আগামীকাল ভালো কোনো সমাধান আসবে।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শিক্ষকেরা রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তারা প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগের দিকে পদযাত্রা করেন। এ সময় শাহবাগে শিক্ষকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জের শিকার হন। তাদের ওপর জলকামান ব্যবহার করা হয়। এতে অনেকেই আহত হন। তবে লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহারের পর এখনও শিক্ষকরা সড়কে অবস্থান করছেন।