আবু সাঈদ, বরগুনা থেকে:
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ ক্রমেই উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড়টি ২৭ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর এ আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ঘিরে আতঙ্কে রয়েছে বরগুনার উপকূলীয় অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।
বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী, তালতলী ও আমতলী উপজেলার অসংখ্য জায়গায় বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, জেলার ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে নলটোনা, পালের বালিয়াতলী, কালমেঘা, রামনা ও কালিকাবাড়ী এলাকায় অন্তত এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে বরগুনায় থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। জোয়ারের সময় নদী ফুলে উঠে উপকূলীয় চরাঞ্চল ও বেড়িবাঁধের বাইরের নিচু এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ২.৭ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। এতে গ্রামবাসীরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
বিষখালী নদীর তীরবর্তী হরিণঘাটা ও জিনতলা এলাকার শতাধিক বসতঘর মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব এলাকার মানুষ ভাঙনের আশঙ্কায় জরুরি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
পাউবো সূত্র জানায়, জেলার অন্তত ১০টি স্থানে বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, যেখানে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আরও প্রায় অর্ধশত স্থানে বাঁধগুলো মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে জরুরি মুহূর্তে ব্যবহারের জন্য জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ মোকাবেলায় এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিশেষ নির্দেশনা তারা পাননি।
এদিকে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বরগুনা জেলা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, “ঝড়ের আশঙ্কা মাথায় রেখে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলকে সতর্ক ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
উপকূলবাসীরা এখন সরকারি সহায়তা ও নিরাপদ আশ্রয়ের দিকেই তাকিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে পড়ে বরগুনার মানুষ। এবারও ‘শক্তি’ নামের ঘূর্ণিঝড় সামনে রেখে সেই আতঙ্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে।