মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি,
দেশের তৃতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সিগঞ্জে এই বছর বাম্পার ফলনের পরও আলুর দাম কম থাকায় কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উৎপাদন খরচই উঠছে না, ফলে আলু এখন কৃষকদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের ছয়টি উপজেলায় মোট ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। মোট উৎপাদন ১০ লাখ ৬০ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার ৬৯ মেট্রিক টন বেশি। তবে বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষিরা হতাশা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
আলু চাষি আব্বাস খালাসী জানান, তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে ৩.৫ কাঠা জমিতে আলু চাষ করেছেন। ভাল ফলন সত্ত্বেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। শিলই ইউনিয়নের শাহা-আলম মাঝি বলেন, ঋণ পরিশোধের জন্য সাড়ে পাঁচশত বস্তা আলু বিক্রি করেছেন, যা থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, ১৪শ বস্তা আলু এখনও হিমাগারে রয়েছে, কিন্তু শেষ সময়ে ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।
হিমাগারে আলু সংরক্ষণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে পড়েছেন। বীজ আলুর দাম সিন্ডিকেটের কারণে ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৩০-৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। সার ও কীটনাশকের দামও বেড়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
বর্তমানে মুন্সিগঞ্জে হিমাগার পর্যায়ে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪ টাকায়। শ্রমিক খরচ, নষ্ট আলু ও হিমাগারের ভাড়া মিলিয়ে চাষির হাতে মাত্র ৪ টাকা ৬ পয়সা আসছে, যেখানে উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৫ টাকা। স্থানীয় বাজারে খুচরায় আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০ টাকায়।
মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত আমাদের সময়কে জানান, এ মৌসুমে জেলায় প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। জেলায় মোট ৫৮টি হিমাগার রয়েছে, যেগুলোতে ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ সম্ভব। ইতোমধ্যে ৪ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকি আলু স্থানীয় পদ্ধতিতেও সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।