নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় চিকিৎসকের গাফিলতি ও সময়মতো অস্ত্রোপচার না করায় সুমনা আক্তার (৩৫) নামে এক প্রসূতির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ডিমলা সদরের মেডিনোভা ক্লিনিকে, যা এর আগেও অবহেলার কারণে বিতর্কিত ছিল বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা যায়, ডিমলার বালাপাড়া ইউনিয়নের মধ্য ছাতনাই ময়দানের ডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল ইসলামের গর্ভবতী স্ত্রী সুমনা আক্তারকে গত মঙ্গলবার সকাল ১১:৩০ মিনিটে মেডিনোভা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। তবে পাঁচ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও জরুরি সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য নির্ধারিত চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রক্তশূন্যতার অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করে এবং রোগীর রক্তের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে তাদের রক্ত সংগ্রহে ব্যস্ত রাখে। একপর্যায়ে সুমনা অচেতন হয়ে পড়েন। পরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় প্রসব করানোর চেষ্টা করলে সুমনার মৃত্যু ঘটে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এরপর সন্ধ্যায় তাকে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়, যেখানে সুমনার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
ঘটনার পর মৃত প্রসূতির পরিবারের পক্ষ থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অবহেলার অভিযোগ ওঠে। সুমনার দুলাভাই আব্দুর রহিম জানান, “ভর্তির সময় সুমনার অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু সময়মতো সিজার না করায় তার মৃত্যু হয়েছে।”
এদিকে, মেডিনোভা ক্লিনিকের রেজিস্ট্রারে ভর্তির সময় ওভাররাইট করে ১১:৩০-এর জায়গায় ৩:৩৫ লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যাতে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে।
মেডিনোভা ক্লিনিকের ম্যানেজার হাসিমুল ফারুক বলেন, “প্রসূতির রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ ছিল, যা ডিমলায় দুষ্প্রাপ্য। রোগীর স্বজনদের রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা সময়মতো দিতে পারেনি।”
অন্যদিকে, ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মোঃ মমিনুর রহমান জানান, “ভর্তির পর রক্তশূন্যতা দেখা দিলে আমরা রোগীকে রংপুরে স্থানান্তরের পরামর্শ দিই। আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না।”
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, “আমি রংপুরে মিটিংয়ে আছি, পরে কথা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরানুজ্জামান জানান, “লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, “বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
এদিকে, এলাকাবাসীর দাবি—একাধিক মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যাওয়া মেডিনোভা ক্লিনিক আবারও কিভাবে চালু হলো, তা তদন্ত হওয়া জরুরি। তারা অবিলম্বে এই প্রাণঘাতী ক্লিনিকটি স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানান।