April 8, 2025, 7:38 pm

আছিয়ার সাথে সেদিন কি ঘটেছিলো: উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

মোঃ নিজামুল ইসলাম

আছিয়ার সাথে সেদিন কি ঘটেছিলো: উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

দেশ তোলপাড় করা মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার ৮ বছরে বয়সী শিশু আছিয়ার মা মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারে অভিযোগ, বড় মেয়ের স্বামী সজিব হোসেনের সহায়তায় আছিয়াকে বোনের শ্বশুর হিটু শেখ ধর্ষণ করে। ঘটনাটি শাশুড়ি জাবেদা বেগম এবং তার ভাশুর রাতুলও জানত। তারা এই নৃশংস ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আছিয়াকে হত্যার চেষ্টা করে।

শনিবার সকালে আছিয়ার বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় লিখিত এজাহার পাঠান শিশুটির মা। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪)–এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। এই মামলায় আছিয়ার ভগ্নীপতি সজিব (১৮), তার ভাই রাতুল (২০), তাদের বাবা হিটু শেখ (৪২) ও মা জাবেদা বেগম (৪০)। আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম বলেন, আছিয়া ঢাকায় নিবিড় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মায়ের পাঠানো এজাহার অনুযায়ী মামলা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে থাকা চার আসামিকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।

মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে:
গত চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার সজিব হোসেনের সঙ্গে আছিয়ার বড় বোনের বিয়ে হয়। সেই বাড়িতে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর থাকে। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল শ্বশুর হিটু শেখ। যা পরিবারের সবাই জানত। এ নিয়ে কয়েক দফা ঝগড়াও হয়েছে। এমন অবস্থায় ১লা মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আছিয়া।

গত ৫ই মার্চ, বুধবার রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় আছিয়া। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, আছিয়া পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন সে বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে ব্যথা। বড় বোন ভেবেছিল আছিয়া ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। সকাল ৬টার দিকে সে আবার বোনকে ব্যথার কথা বলে। কারণ জানতে চাইলে বোনকে জানায়, রাতে ভগ্নিপতি সজিব দরজা খুলে দিলে শ্বশুর হিটু শেখ তার মুখ চেপে ধরে তুলে নিয়ে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। সে চিৎকার করতে পারেনি, তার গলা চেপে ধরেছিল। পরে আহত অবস্থায় আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।

ঘটনা শুনে আছিয়ার বড় বোন তার মাকে ফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে সজিব ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করে। কাউকে বললে আছিয়াকে খুন করার হুমকি দেয়। পরে দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখে। সকালে এক প্রতিবেশী নারী বাড়িতে এলে রাতুল দরজা খুলে দেয়। অচেতন আছিয়ার মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে জাবেদা বেগম অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আছিয়াকে জিনে ধরেছে বলে জানায়। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা ধর্ষণের আলামত বুঝতে পারায় জাবেদা বেগম হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে আছিয়ার মা হাসপাতালে যান।

পুলিশের বরাতে জানা যায়, আছিয়ার বাড়ি শ্রীপুর উপজেলায়। কয়েকদিন আগে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায়। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসে শাশুড়ি জাবেদা বেগম। পরে আছিয়ার মা আসেন। দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য আছিয়াকে ফরিদপুর মেডিকেলে এবং পরে সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার রাতে আছিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। শনিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) পাঠানো হয়েছে।

আছিয়ার বড় বোন জানান, প্রায় ২০-২২ দিন আগে তার সঙ্গে একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। সেদিন সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। তিনি ঘরে আলো জ্বালিয়ে রেখে টয়লেটে যান। টয়লেট থেকে ফিরে দেখেন ঘরের আলো নেভানো। হঠাৎ কেউ একজন তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। উচ্চতা ও শরীরের গঠন দেখে বুঝতে পারেন শ্বশুর। ঘটনাটি তিনি সজিবকে জানালে সে উল্টো তাকে অপবাদ দিয়ে তাকে গালাগাল করে।

তিনি বলেন, এ ঘটনা বাড়িতে গিয়ে জানাই, সেখান থেকে আর শ্বশুরবাড়ি ফিরতে চাইনি। কিন্তু বাড়ি থেকে বুঝিয়ে আবার পাঠানো হয়। আমার মনে সব সময় ভয় কাজ করত, যদি আরও খারাপ কিছু ঘটে। তাই আমার সঙ্গে আমার ছোট বোনকেও পাঠায়। এখন সেও সর্বনাশের শিকার। এলাকার মানুষের কাছ থেকে শুনেছি, এর আগেও দুইটা মেয়ের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে শ্বশুর হিটু শেখ।

জানা যায়, আছিয়ার ভগ্নীপতি সজিব, তার ভাই রাতুল, তাদের বাবা হিটু শেখ ও মা জাবেদা বেগম— গ্রেপ্তারের পর কেউই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথাবার্তা অসংলগ্ন ও পরস্পরবিরোধী ছিল।

পুলিশ জানায়, অচেতন অবস্থায় আছিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


আমাদের পেজ লাইক করুন