June 16, 2025, 5:18 pm

বাড়ি কবে যাবো?

মিরাজ হুসেন প্লাবন

— সাফিয়া নূর মোকাররমা,

“বাড়ি থেকে একবার বের হলে আর কখনও স্থায়ীভাবে থাকা হয় না”—
এই কথাটি প্রথম শুনি বড় ভাইয়ের মুখে, যখন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ করে ভর্তি কোচিংয়ের জন্য চট্টগ্রামে এসেছিলাম। কথাটি শুনে তখন থমকে গিয়েছিলাম।
তেমন কিছু বোঝার বয়স হয়নি তখন, কিন্তু আজ চার বছর পর, সেই বাক্যটির ভার টের পাই বুকের ভেতর।

২০২১ সালে বাড়ি ছেড়ে এসেছিলাম। এরপর আর কখনও আট-নয় দিনের বেশি থাকা হয়নি।
চাইলেও আর ফিরে যাওয়া হয় না আগের মতো—না সেই দুপুরবেলার ঝিম ধরা উঠোনে, না বাবার চায়ের কাপে ভাগ বসাতে, না ছোটবেলার ঈদের জামা দেখিয়ে খুশি হবার দিনে।

আমরা যারা শিক্ষাজীবনের কারণে নিজ জেলা ছেড়ে অন্য শহরে থাকি, তাদের জীবনে একধরনের নিঃসঙ্গতা জমে ওঠে নিঃশব্দে।
হলে ঈদের ছুটি আসলে সবাই ব্যাগ গোছায়, টিকিট কেটে বাড়ি যায়।
আমি শুধু ভাবি—বাড়ি কবে যাবো?

২০ দিন আগেই পুরনো স্কুলের বন্ধুদের ইনবক্স করেছি—“তুই কবে যাচ্ছিস?”, “দেখা হবে?”
কেউ কেউ এখন আর সাড়া দেয় না। সময়ের নিয়মে হয়তো বন্ধুত্বেরা পরিণত হয় নিঃসঙ্গ স্মৃতিতে।
তবু কিছু নাম থেকে যায়—ভালোবাসার চাহিদা রেখে, দূরত্বের অভিমান নিয়ে।

বহুদিন পর এপ্রোন পরে ক্লান্ত সময়ের শেষে আয়নায় চোখ রেখে নিজেকে দেখি।
পাঠশালার স্বপ্ন ছিল, সেবা করব, গড়ব কিছু। সেই পথেই আছি।
তবু ঈদের মতোন কিছু দিন আসে, যেদিন জীবনের সমস্ত ব্যস্ততা থেমে গিয়ে একটাই প্রশ্ন করে—
“তুমি কোথায় থাকো? কোথায় ফিরতে চাও?”

বাড়ি—এই শব্দটার মধ্যে কী যে এক শান্তি!
সেই খোলাচত্বর, ভাঙা মাচা, মা’র আহার দেওয়ার ডাক—সব যেন অপেক্ষায় থাকে, কিন্তু সময় দেয় না ফিরে যাওয়ার সুযোগ।

তবু আশাবাদী হতে চাই।
এই ঈদে সবাই ভালো থাকুক, সবাই ঘরে ফিরুক।
কারও মন খালি না থাকুক, কারও ঘরে নিঃসঙ্গ আলো না জ্বালুক।

আর যদি কেউ কখনও জিজ্ঞেস করে—“বাড়ি কবে যাবো?”
তবে নির্ভার কণ্ঠে বলব—”খুব শিগগির। এবার আর দেরি করবো না”

লেখক: সাফিয়া নূর মোকাররমা,
শিক্ষার্থী, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (মেডিসিন অনুষদ)।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


আমাদের পেজ লাইক করুন