ঢাকা প্রতিনিধিঃ
ঐতিহাসিক শহীদ আনোয়ারা উদ্যানকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের দাবিতে ছাত্র-যুবসমাজের অংশগ্রহণে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে ২০২৫) সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের সামনে আয়োজিত এই সমাবেশের আয়োজন করে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা ও পরিচালনা কমিটি এবং পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন তেজগাঁও কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিক্তা দাস এবং সঞ্চালনায় ছিলেন গ্রীন ভয়েস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমন।
বক্তারা জানান, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ আনোয়ারা উদ্যান এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মেট্রোরেল নির্মাণ কর্তৃপক্ষের দখলে রয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের ২৬ মার্চের মধ্যে উদ্যান খালি করে তা সংস্কার ও সবুজায়ন করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ২০১৮ সাল থেকে উদ্যানটিকে তাদের নির্মাণ সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করে আসছে। এমনকি ২০২৩ সালে সেখানে ‘স্টেশন প্লাজা’ নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়, যেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনাসহ রেস্টুরেন্ট, কফি শপ ও বিনোদনকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
গ্রীন ভয়েস-এর প্রধান সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, “শহীদ আনোয়ারা উদ্যান শুধু একটি উদ্যান নয়, এটি জনগণের মুক্তির প্রতীক ও একটি ঐতিহাসিক স্মৃতি। একে স্টেশন প্লাজায় রূপান্তরের অপচেষ্টা জনস্বার্থ ও পরিবেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।”
সিনিয়র সাংবাদিক ও গ্রীন ভয়েস উপদেষ্টা শুভ কিবরিয়া বলেন, “একটি শহরের মানবিক রূপ বোঝা যায় তার উন্মুক্ত সবুজ স্থানগুলো দেখে। এই উদ্যানকে বাণিজ্যিক স্থাপনায় পরিণত করার পরিকল্পনা নগরবাসীর সাংস্কৃতিক চেতনা ও পরিবেশের ওপর আঘাত।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সিক্তা দাস বলেন, “শহীদ আনোয়ারা উদ্যান গণজাগরণের প্রতীক। এটিকে ঘিরে তরুণদের এই সমাবেশ প্রমাণ করে—আমরা মানবিক, বাসযোগ্য ও সবুজ ঢাকা গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনতিবিলম্বে এই উদ্যান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হোক।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গ্রীন ভয়েস এর সহ-সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম রাতুল, মো. আরিফুর রহমান, শাকিল কবির, ফাহমিদা নাজনীন তিতলি, শাহরিন সেজুতি (তেজগাঁও কলেজ), আসাদুল ইসলাম (ঢাকা কলেজ), মেহেদী হাসান শুভ (এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি), রহমতুল্লাহ রিটু (হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ), মেহেদী হাসান পলাশ (উদ্যান রক্ষা কমিটি), আসফিয়া তাসনিম মুনা (বদরুন্নেসা কলেজ) এবং জুয়েল রানা (হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ) প্রমুখ।
বক্তারা সর্বসম্মতিক্রমে উদ্যানটি দ্রুত দখলমুক্ত করে সংস্কার ও সবুজায়নের মাধ্যমে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানান।