July 7, 2025, 3:57 pm

সুনামগঞ্জের ছাতকে ‘ইয়াবা মনির’ ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন?

মিরাজ হুসেন প্লাবন

সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় ‘ইয়াবা মনির’ নামে পরিচিত সাজ্জাদ মাহমুদ মনির ও তার পিতা আবুল বাশারের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সরকারি জমি দখল, মাটি-পাথর ও গাছ চুরি, মাদক কারবার, চাঁদাবাজি ও সাংবাদিকদের হুমকিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, আবুল বাশার, যিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বাসিন্দা, ছাতকে সওজ বিভাগে চাকরি করতেন। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি পৌর শহরের দক্ষিণ বাগবাড়ি এলাকায় সুরমা নদীর তীরে সওজের একটি সরকারি বাসায় অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই ঘরটি দখলে রেখেছেন।

সরকারি বাসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আবুল বাশারের ছেলে মনির সেখানে গড়ে তুলেছে একটি মাদকের আস্তানা। ২০২২ সাল থেকে সওজের জমি থেকে মাটি, পাথর ও গাছ কেটে বিক্রি করে অর্ধকোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ওই অর্থে গ্রামের বাড়িতে বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেছে সে।

২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর হাতে মাটি চুরির সময় এক ট্রাক চালকসহ দুইজন ধরা পড়ে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ‘ইয়াবা মনির’-এর নাম উঠে আসে মূল হোতা হিসেবে। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলাও হয়। এর আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় মনিরের ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যা জনমনে ক্ষোভের জন্ম দেয়।

এছাড়া, নদীপথে চোরাচালান, চাঁদাবাজি, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণসহ একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি চোরাচালানকালে পুলিশের আগমনের আগেই ১৬ বস্তা শাড়ি ও শাল গায়েব করার অভিযোগও উঠে এসেছে মনির চক্রের বিরুদ্ধে।

এতসব অপরাধের প্রতিবাদ ও সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে মনির ও তার অনুসারীরা। ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন সংবাদ ছড়িয়ে তাদের সম্মানহানির চেষ্টা চলছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ছাতকের সুশীল সমাজ, সচেতন নাগরিক এবং স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার প্রতিনিধিরা।

তারা ‘ইয়াবা মনির’ ও তার চক্রকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। অন্যদিকে, ছাতক সওজ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত আবুল বাশারকে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে এবং তার ছেলে মনিরকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে সরকারি বাসায় বসবাসের বৈধতার প্রশ্নে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেননি।

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন— এত অপকর্ম করেও কেন আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে ‘ইয়াবা মনির’? এর পেছনে কি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া রয়েছে?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


আমাদের পেজ লাইক করুন