মোশাররফ হোসেন, ছাতক (সুনামগঞ্জ):
সিলেট অঞ্চলে সাদা লুটকারীদের দাপটে যখন দেশজুড়ে সমালোচনা চলছে, তখন ভিন্ন চিত্র ছাতক উপজেলা। প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত এ এলাকায় সবসময় সক্রিয় থাকে বালু–পাথর লুটকারী অসাধু সিন্ডিকেট। কিন্তু তাদের কার্যক্রম একের পর এক ভেঙে দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম।
গত বছরের ১১ নভেম্বর ছাতকে ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর মাত্র ২০০ কার্যদিবসেই দায়ের করেছেন ২৪০টি মামলা, যা উপজেলার গত ১৬ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। মাদক, অবৈধ বালু উত্তোলন, পরিবেশ আইন, ভোক্তা অধিকার ও সড়ক পরিবহন আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই চলছে মোবাইল কোর্ট অভিযান।
ইউএনও’র দুঃসাহসী পদক্ষেপে শুধু মাদক নিয়ন্ত্রণেই দায়ের হয়েছে ৭২টি মামলা, যেগুলোতে সাজা ভোগ করেছে সমসংখ্যক আসামি। ইজারা বহির্ভূত নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে ১৫টি মামলা। এ পর্যন্ত জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ড্রেজার, বাল্কহেড, নৌকা ও ৫০ হাজার ঘনফুট বালু।
রাজস্ব আয়ে এনেছেন নতুন গতি—ছাতক পৌরসভার রাজস্ব আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। কঠোর নজরদারিতে হাটবাজার ও সরকারি সম্পদ রক্ষায়ও সফল হয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা ও প্রশংসার প্রতীক হয়ে উঠলেও অপরাধীদের কাছে তিনি এখন আতঙ্কের নাম, অনেকেই তাঁকে ডাকছেন ‘ফাটাকেস্ট ইউএনও’।
তবে সম্প্রতি এক মামলায় বালুখেকোদের দ্রুত জামিন মঞ্জুর হওয়ায় সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে আইনের কঠোরতা নিয়ে। প্রশাসনের অভিযানের পরও আদালতের শিথিলতায় স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদীর স্রোত পরিবর্তন, বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ডেকে আনবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, “নদী রক্ষায় ছাতকের ইউএনও’র পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। আমরা চাই, এ ধরনের সৎ কর্মকর্তাদের সঠিক মূল্যায়ন হোক।”
এ বিষয়ে ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “যত বাধাই আসুক, সরকারি সম্পদ রক্ষা করব। মাদক ও অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ছাতক প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে।”