বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেন ছেলে !!
কয়েক মাস ধরে বাড়িছাড়া বৃদ্ধ হোসেন মিয়া ও তার স্ত্রী আয়েশা বেগম। ছেলে রাশেদ মিয়া তাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বসতঘরে ঝুলিয়ে দেন তালা। স্ত্রীকে নিয়ে রাশেদের দখলে এখন ওই ঘর। এ অবস্থায় প্রাণভয়ে আছেন হোসেন মিয়া ও আয়েশা বেগম। এমন ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার কোড্ডা গ্রামে।
গত ১৭ অক্টোবর পুলিশ সুপারের কাছে বাড়িতে ফিরতে লিখিত আবেদন করেন আয়েশা বেগম। ওই আবেদনে এলাকার উচ্ছৃঙ্খল লোকদের নিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ছেলে রাশেদের বিরুদ্ধে। এর আগেও আয়েশা বেগম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন ছেলের বিরুদ্ধে। মামলায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাশেদকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই দিনই রাশেদের স্ত্রীর ভাই পাশের ঘাটিয়ারা গ্রামের রায়হান মোল্লা, কোড্ডা গ্রামের ফিরোজ মিয়া, নিয়ামত উল্লাহ, দমিয়া, সোহাগ মিয়া, রেজ্জেক মিয়া, সাচ্চু মিয়া, মনির মিয়া, রহমত আলী, মিরাজ মিয়া, বিশাল, রোকসানা বেগমসহ আরও কয়েকজন আয়েশা বেগম ও তার স্বামী হোসেন মিয়াকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর তালা দেন বসতঘরে। এরপর হোসেন মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান। তবে বাড়িতে ফিরলে ছেলে ও সহযোগীদের হাতে প্রাণ হারানোর আশঙ্কা করছেন তারা।
এবারও রাশেদ মিয়া (৪৮) ও তার স্ত্রী রোকসানা বেগমের (৩৮) বিরুদ্ধে গত ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আয়েশা বেগম বাদী হয়ে অভিযোগ করেন।
স্থানীয়রা জানান, হোসেন মিয়া-আয়েশা দম্পতির চার ছেলের মধ্যে রাশেদ ছাড়া বাকি তিনজন প্রবাসে থাকেন। রাশেদ স্ত্রীর সলাপরামর্শে সম্পত্তির হিস্যা বুঝে লিখে নেন বাবার কাছ থেকে। কিন্তু সেই সম্পত্তি মাদক সেবন ও জুয়া খেলে বিক্রি করে দেন। এরপর টাকার জন্য আবারও মা-বাবাকে অত্যাচার-নির্যাতন করতে থাকেন। এদিকে বৃদ্ধের অন্য ছেলেরা বিদেশ থেকে দুই লাখ টাকা পাঠান। এখন এই টাকা নেওয়ার জন্য তাদের মারধর করেন প্রতিনিয়ত।
সরেজমিন গত বৃহস্পতিবার কোড্ডা গ্রামে দেখা যায়, হোসেন মিয়ার বসতঘরে তালা মারা। বাড়িতে রাশেদের স্ত্রী রোকসানা আছেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, এসব ঘটনায় সমাজের মাতবর শ্রেণির লোকেরা ছেলে রাশেদের পক্ষ নিয়েছেন।
আরও জানা গেল, রাশেদ বাবার কাছ থেকে সম্পত্তি লিখে নিয়ে পাশের ঘাটিয়ারা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে ঘর উঠিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরে নিজের বাড়িতে ফিরে এখানেও ঘর উঠিয়ে থাকেন। এর মধ্যে হোসেন মিয়া তার স্ত্রী ও অন্য পাঁচ সন্তানের নামে বাকি সম্পত্তি সমবণ্টন করে লিখে দেন। এতে রাশেদ ক্ষুব্ধ হন। তবে রাশেদের স্ত্রী রোকসানা বেগমের দাবি, সব সম্পত্তি তার স্বামীর অর্জিত। তবে দলিল মা-বাবার নামে করা। ফলে চুরি করে অন্য ছেলেদের নামে দলিল করে দিয়েছেন তারা।
মাঞ্জু খলিফা নামে এক প্রতিবেশী জানান, হোসেন মিয়া ছেলে রাশেদকে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরিয়ে এনে বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। আর বাকি তিন ছেলের নামে সম্পত্তি দলিল করে দেন। আবার ছেলের জেলে যাওয়া নিয়েও তাদের মারামারি হলে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে পুলিশ তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে এনে ঘরের তালা খুলে থাকার ব্যবস্থাও করে দেয়। কিন্তু এখন কেন তারা বাড়িতে থাকতে পারছেন না, তা বলতে পারব না।
গ্রামের মাতবরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোড্ডা গ্রামের রাকিবুল ইসলাম বলেন, গ্রামের সরদাররা কয়েকবার মিটিং করেও কোনো সমাধান দিতে পারেননি। মা-বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে। ওই গ্রামের সরদাররা অন্যায় করছে। এ জন্য তারা দায়ী।
জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ওসি মোজাফফর হোসেন বলেন, বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমাদের জানাতে হবে। বিষয়টি আবার খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
সুত্রঃ কালবেলা