পৃথিবীতে মানুষকে আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছেন। এখানে সবাইকে যেমন আসতে হবে তেমনই সবাইকে এখান থেকে যেতে হবে। সাথে নিতে হবে কেয়ামতের দিনের লম্বা হিসাবের পথের জন্য রসদ।
প্রত্যেকটি মানুষের মৃত্যুই তার জন্য কেয়ামত। তবে এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হবে। যার মধ্য দিয়ে আসমান জমিন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা এই মহা প্রলয়ের কথা বারবার স্মরণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
আর তোমরা সেই দিনকে ভয় করো, যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহ তাআলার দরবারে উপস্থিত করা হবে। তখন যে যা অর্জন করেছে তা সম্পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে। আর তাদের প্রতি একটুও জুলুম করা হবে না। (সুরা বাকারা ২৮১)
কেয়ামত একবারে আসবে না। কেয়ামত যে দিনদিন নিকটবর্তী হচ্ছে তা মানুষ বুঝতে পারবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন কেয়ামতের অন্যতম একটি আলামত। এরপর বেশ কিছু ছোট ছোট আলামত প্রকাশ পেলেও কেয়ামত যখন কাছাকাছি আসবে তখন বড় বড় কিছু আলামত পাওয়া যাবে। যার মধ্যে ১০টি অন্যতম।
ইমাম মাহদীর আগমন
দুনিয়ায় জুলুম নির্যাতন থেকে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য একজন পথ প্রদর্শক নেতা আসবেন। যাকে আরবিতে বলা হয় ইমাম মাহদী। এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
মাহদী আসবেন আমার বংশধর হতে। তার কপাল হবে উজ্জ্বল এবং নাক হবে উঁচু। পৃথিবী থেকে জুলুম-নির্যাতন দূর করে দিয়ে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দেবেন। সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন। (আবু দাউদ ৬৬১২)
দাজ্জালের আগমন
মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যেসব মুমিন জীবিত থাকবেন তাদের জন্য ইমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও দাজ্জালের ফেতনার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন।
একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোনো নবীই তার উম্মতকে বলেননি। তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ অন্ধ নন। (তিরমিজি, কিতাবুল ফিতান)
ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর আগমন
সুরা নিসায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ঈসা আলাইহিস সালামকে কেউ হত্যা করেনি বরং তাকে আল্লাহ তাআলা তার কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। কেয়ামতের আগে তাকে আবার পাঠানো হবে। তখন পৃথিবীর সব ধর্মের মানুষ তাকে মেনে নেবে।
ইয়াজুয-মাজুযের আগমন
ইয়াজুয-মাজুযের দল বের হওয়া কেয়ামতের একটি অন্যতম বড় আলামত। এরা বের হয়ে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও মহা ফিতনার সৃষ্টি করবে। দলে দলে মানব সমাজে চলে এসে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাবে। তাদের মোকাবিলা করার মতো তখন কারো কোনো শক্তি থাকবে না।
তিনটি বড় ধরনের ভূমিধস
উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি চলে যাওয়ার পর অচিরেই তিনটি স্থানে ভূমিধস হবে। একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি হবে আরব উপদ্বীপে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল, সৎ লোক বর্তমান থাকতেই কি তাতে ভূমিধস হবে? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপকাজ বেশি হবে। (মুসলিম ২৯০১)
বিশাল একটি ধোঁয়ার আগমন
কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে বিশাল আকারের একটি ধোঁয়া বের হয়ে আকাশ এবং জমিনের মধ্যবর্তী খালি জায়গা পূর্ণ করে ফেলবে। এই ধোঁয়া মুমিন ব্যক্তিদেরকে সামান্য একটু সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত করে দেবে। কাফেরদের শরীরের ভেতরে প্রচণ্ডভাবে প্রবেশ করবে। ফলে তাদের শরীর ফুলে যাবে এবং শরীরের প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে ধোঁয়া বের হবে। এটি তাদের জন্য একটি যন্ত্রণাদায়ক আজাবে পরিণত হবে।
পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হবে
বর্তমানে প্রতিদিন পূর্ব দিক থেকে সূর্য উদিত হচ্ছে। কেয়ামতের আগে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়ে পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয় ঘটবে। এটি হবে কেয়ামতের অত্যন্ত নিকটবর্তী সময়ে। পশ্চিমাকাশে সূর্য উঠার পর তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। (বুখারি ৬৫০৬)
দাব্বাতুল আরদ্
কেয়ামতের আগে দাব্বাতুল আরদ্ নামক এক অদ্ভুত জন্তু বের হবে। জন্তুটি মানুষের সাথে কথা বলবে। যা অন্যতম সর্বশেষ ভয়াবহ আলামত। পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পর তওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে এটি বের হবে।
ইয়েমেন থেকে আগুন
কেয়ামতের পূর্বে ইয়েমেনের আদন নামক স্থানের গর্ত থেকে একটি ভয়াবহ আকারের আগুন বের হয়ে মানুষকে হাশরের দিকে একত্রিত করবে। (আবু দাউদ ৪৩১১)
কোমল ও ঠান্ডা বাতাসের মাধ্যমে মুমিনদের রুহ কবজ
কেয়ামতের আগে একটি বাতাস এসে মুমিনদের জান কবজ করে নেবে। তারপর পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার নাম উচ্চারণ করার মতো কোনো লোক থাকবে না। নিকৃষ্ট লোকেরাই বেঁচে থাকবে। তাদের ওপরেই কেয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। (মুসলিম ১১৭)