মেঘনায় স্পিডবোটের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীতে স্পিডবোট ও কাঠের নৌকার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে অজ্ঞাত স্পিডবোটের চালককে আসামি করে গজারিয়া থানায় মামলাটি করেন নিহত অদুদ ব্যাপারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী।
মামলার বিষয়টি আজ রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে নিশ্চিত করেন গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ। তিনি বলেন, নিহত অদুদ ব্যাপারী ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, ওদুদসহ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা রাতের আধারে নৌকায় করে মেঘনা নদী পার হচ্ছিলেন। সে সময় স্পিডবোট তাঁদের নৌকায় উঠে যায়। এতে কাঠের নৌকার চার যাত্রী মারা যান। ওই স্পিডবোটের অজ্ঞাত চালককে আসামি করে মামলাটি করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয়ের নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডবিস্নউটিএর উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটটির সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নৌযান দুটিতে ১০-১১ জন আরোহী ছিলেন।
এ ঘটনায় সকাল পর্যন্ত তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও স্পিডবোট চালক নাঈম নিখোঁজ ছিল। তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডবিস্নউটিএ। এক পর্যায়ে শনিবার দুপুর ২টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোপ থেকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা গেছে, প্রতি রাতে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে মেঘনা নদী থেকে নয়ন ও পিয়াসের লোকজন খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু লুট করে আসছিলেন। বালু উত্তোলনের সময় তাঁরা নিজস্ব কয়েকটি স্পিডবোট ও কাঠের ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশে মহড়া দেন।
গত শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনাকবলিত স্পিডবোট ও নৌকাটি বালুমহালের অবৈধ বালু উত্তোলনে মহড়া ও বালু নিতে আসা বাল্কহেডগুলো নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিল। রাতে অন্ধকার ও কুয়াশার কারণে স্পিডবোট ও ট্রলার একটি অন্যটিকে দেখতে না পাওয়ার কারণে সংঘর্ষ হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা সংঘর্ষের শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।
গজারিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঘটনার সময় তাঁরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডের মাধ্যমে বিক্রির কাজে সহযোগিতা করছিলেন। নিহত অদুদ ব্যাপারী বিরুদ্ধে গজারিয়া থানায় মাদক, মারামারি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১০টি মামলা আছে। কয়েকটি মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া নিহত মো. বাবুল পাঁচটি মামলার আসামি ছিলেন।
দুর্ঘটনার পরপরই পিয়াসের বড় ভাই গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের অদুদ ব্যাপারী (৩৫), মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চর ঝাপটা এলাকার মো. বাবুল (৪৮) এবং একই উপজেলার আধারা ইউনিয়নের জাজিরা এলাকার মাহমুদ গাজীর (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে মো. নাঈমের (২৫) নামের আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আবদুল হালীম (৩৪) নামের গুরুতর আহত একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।