নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেবীগঞ্জের করতোয়া নদীর উপর নির্মিত চতুর্থ চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু, যা স্বাধীনতা পরবর্তী দেবীগঞ্জবাসীর জন্য এক যুগান্তকারী প্রাপ্তি, আজও ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়।
১৯৯৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করেন। এর আগে, ১৯৯৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তবে তারও আগে, ১৯৮৮ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ করতোয়া সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
করতোয়া নদী এবং সেতুর গুরুত্ব:
করতোয়া নদী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের পঞ্চগড়, দিনাজপুর এবং বগুড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এর সর্ববৃহৎ অংশ দেবীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।
সেতু নির্মাণের আগে নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত কঠিন। বর্ষাকালে দেবীগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়নের মানুষ নৌকায় খরস্রোতা নদী পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা ও অন্যান্য নাগরিক সেবা নিতে আসতে বাধ্য হতো।
সেতু নির্মাণ ও এর প্রভাব:
১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া সেতুর নির্মাণকাজ ১৯৯৮ সালে শেষ হয়। ৫৭৭.৪০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ ও চীনের মৈত্রী একটি মাইলফলক স্থাপন করে।
সেতু উদ্বোধনের পর দেবীগঞ্জের মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি হয়। সেতুটি সরকারের রাজস্ব আদায়েও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
পর্যটন ও বিনোদন:
সেতুর দুই পাড় দেবীগঞ্জবাসীর বিকেলের অবসর কাটানোর অন্যতম স্থান হয়ে ওঠে। ২০০৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক সেতুর পূর্ব প্রান্তে “ডিসি পার্ক” নামে একটি শিশু পার্ক নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
চতুর্থ চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু দেবীগঞ্জবাসীর জন্য কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি তাদের উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত প্রতীক। নতুন প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।