আন্দোলনের সাংবিধানিক যাত্রা ভুল হলে দায় সবার: আসিফ নজরুল
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সাম্প্রতিক বক্তব্যে তিনি সরকার পতনের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাংবিধানিক পথে যাত্রা শুরুর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘যদি সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেই ভুলের দায় আন্দোলনে থাকা সবার ওপর বর্তায়।’ এই মন্তব্যটি তিনি ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনায় তুলে ধরেন। আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, বাংলা একাডেমিতে, যেখানে আয়োজন করে আদর্শ ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ব্রেইন।
আসিফ নজরুল ব্যাখ্যা করেন কিভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক পথে এগিয়ে যায়। তিনি একটি স্মৃতিচারণ করেন যেখানে সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে তার কাছে ফোন আসে। ফোনটি তাকে বিভ্রান্ত করেছিল, কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন না এটি কি হুমকি নাকি আলোচনার জন্য আহ্বান। তখন তার স্ত্রী উদ্বেগে পড়ে তাকে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু যখন তিনি সেখানে পৌঁছান, তিনি দেখেন, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অংশসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সাংবিধানিক পথে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয়।
বঙ্গভবনে আলোচনার সময় আসিফ নজরুল খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে বলেন এবং তার মুক্তি দাবি করেন। এই আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কেউ তখন বলছিল না যে আমাদের বিপ্লবী সরকার গঠন করা উচিত বা সাংবিধানিক পথের পরিবর্তে অন্য কোনো পথ নেওয়া উচিত।’
সাংবিধানিক পথে চলা দোষের কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেসময় সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ছিল না। তিনি আরও বলেন, যদি সেই সিদ্ধান্ত ভুল হয়, তবে আন্দোলনে থাকা সকলেই সেই ভুলের অংশীদার।
কিছু সমালোচক কেন শহীদ মিনারে শপথ নেওয়া হয়নি বা বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, অনেকেই সবকিছু জানেন বলে মনে করেন, কিন্তু বাস্তবে তাদের চিন্তাভাবনার ভুল থাকার সম্ভাবনাও থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি এত বড় আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝতে ভুল করতে পারে, তবে বিপ্লবী সরকারের চিন্তাও যে ভুল নয় তা নিশ্চিত করা কঠিন।’
তিনি উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং বলেন, ‘এই যে হাজার হাজার মানুষ জীবন দিল, তারা কি শুধু ন্যূনতম গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছে? না, তারা উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছে।’ এজন্য শুধু নির্বাচন নয়, বরং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংসদে বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা, এবং ইতিহাসের উপর কারো ব্যক্তিগত মালিকানা না আসার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
শেষে, আসিফ নজরুল বলেন, আন্দোলনের শক্তিগুলোর মধ্যে অনৈক্য থাকলে সব সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু অনৈক্য এড়াতে হবে এবং সমাধানে পৌঁছানোর জন্য একসঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সংবিধানের ভেতরে থেকে সমাধান সম্ভব, আবার প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে গিয়েও সমাধান সম্ভব—কিন্তু এজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঐক্য বজায় রাখা।