আক্কাছ আলী, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি সেতু সংযোগ সড়ক না থাকায় এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। ‘বাইদ্দাবাড়ি সেতু এক’ ও ‘বাইদ্দাবাড়ি সেতু দুই’ নামের এই দুইটি আরসিসি সেতু ২০২৩ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং মূল কাঠামোর ৯৫% কাজ ইতিমধ্যে শেষ হলেও ভুমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে না পারায় দুই সেতুই অচল পড়ে আছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানিয়েছে, পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এখনো পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। নতুন সেতুগুলো পুরনো সেতুর পাশে নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণের আগে জমি অধিগ্রহণ না করায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সংযোগ সড়কের জায়গায় স্থানীয়দের বাড়িঘর ও দোকানপাট থাকায় ভূমি মালিকরা উচ্ছেদে আপত্তি জানাচ্ছেন এবং ন্যায্য মূল্যের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
সরকারি হরগঙ্গা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন,
“এই প্রথম দেখলাম সেতু তৈরি হলো, কিন্তু সেতুতে ওঠার রাস্তা নেই! পুরনো ভাঙা সেতু দিয়ে চলাচল করতে আমাদের ভয় লাগে।”
স্থানীয় অটোচালক ইউসুফ বেপারীর অভিযোগ,
“এত টাকা খরচ করে যদি রাস্তা না থাকে তাহলে ব্রিজ বানিয়ে কী লাভ! আমরা এখনও ভাঙা ব্রিজ দিয়ে চলাচল করছি।”
ভূমি মালিকদের অভিযোগ, সেতু নির্মাণের আগে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু না করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
স্থানীয় ভূমি মালিক ইমন আহমেদ বলেন,
“আমরা সরকারি খাসজমিতে না, মালিকানা জমিতে আছি। সরকারি জমি পাশেই ছিল, সেতু ওখানে হলে এত ভোগান্তি হতো না।”
ভূমি মালিক কৃষক কাশেম আলী মোল্লা বলেন,
“আমার ঘর ভাঙতে খরচ হইছে ১৪ লাখ টাকা, অথচ নোটিশে ৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বলা হয়েছে। এটা কি ন্যায্য মূল্য?”
এ বিষয়ে সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুস হোসেন সানি বলেন,
“ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০২২ সালে। বর্তমানে আট ধারায় নোটিশ জারি হয়েছে। জমি বুঝে পেলে সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ধরা হলেও আমরা মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি।”
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্র জানায়,
এই দুটি সেতু নির্মিত হয়েছে ‘জরাজীর্ণ ও অপ্রশস্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলী সেতু আরসিসি সেতু প্রতিস্থাপন প্রকল্প (ঢাকা জোন)’ এর আওতায়।
বাইদ্দাবাড়ি সেতু এক: দৈর্ঘ্য ২৮.২৫ মিটার, প্রস্থ ৮.২৫ মিটার
বাইদ্দাবাড়ি সেতু দুই: দৈর্ঘ্য ৫০.১২ মিটার, প্রস্থ ১০.২৫ মিটার
মোট ব্যয়: ১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা
এখন পর্যন্ত ব্যয়: প্রায় ১৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা
স্থানীয়রা বলছেন, ভুমি অধিগ্রহণ ও নকশার অসংগতি দূর করে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি সেতু চালু করে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করা হোক।