দেশের শেয়ারবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শ্রেণীকরণ বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডগুলো পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে, যা হলো: ‘এ’, ‘বি’, ‘জি’, ‘এন’ এবং ‘জেড’। ডিএসইতে মোট তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৫৭, এর মধ্যে ২৩৬টি সরকারি ট্রেজারি বন্ড এবং ২৬টি কর্পোরেট বন্ড ও ডিবেঞ্চার। এই ২৬০টি বন্ড ও ডিবেঞ্চার শ্রেণীকরণের আওতায় আনা হয়নি, ফলে ৩৯৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড বিদ্যমান পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
শ্রেণীকরণের সূচনা
ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শ্রেণীকরণ প্রথম শুরু হয় ২০০০ সালে, যখন জুলাই মাসে ‘এ’ ও ‘বি’ শ্রেণি চালু করা হয়। সেপ্টেম্বরে যুক্ত হয় ‘জেড’ শ্রেণি, ২০০২ সালে ‘জি’ এবং সর্বশেষ ২০০৬ সালে চালু হয় ‘এন’ শ্রেণি। শ্রেণীগুলোর লক্ষ্য ছিল কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে সহায়তা।
শ্রেণীর মানদণ্ড
কোম্পানিগুলোর শ্রেণীভুক্তির জন্য কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়: যে কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে এবং ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দেয়, তাকে ‘এ’ শ্রেণিতে রাখা হয়। কম লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানিগুলো ‘বি’ শ্রেণিতে স্থান পায়। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ‘এন’, গ্রিনফিল্ড বা উৎপাদনে না আসা কোম্পানিগুলোর জন্য ‘জি’, এবং নিয়মিত এজিএম না করা ও লভ্যাংশ না দেওয়ার কোম্পানিগুলো ‘জেড’ শ্রেণিতে রাখা হয়।
শ্রেণীকরণের প্রয়োজনে
শ্রেণীকরণ ব্যবস্থাটি বিনিয়োগকারীদের ভালো-মন্দ কোম্পানি শনাক্ত করতে এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ‘এ’, ‘বি’, ‘এন’ ও ‘জি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলোতে ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়, তবে এর জন্য আরও কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।
শ্রেণীকরণের নেপথ্যের ইতিহাস
২০০০ সালে ঢাকা চেম্বারের এক আলোচনায় কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করার সুপারিশ উঠে আসে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সমাদৃত হয়। শ্রেণীকরণের জন্য ইংরেজি বর্ণমালার অগ্রাধিকার অনুযায়ী ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’ বর্ণের ভিত্তিতে মান নির্ধারণ করা হয়।
বর্তমান শ্রেণীভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা
বর্তমানে ডিএসইতে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি ২২৯টি, ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত ৮২টি, ‘এন’ শ্রেণিভুক্ত ৪টি এবং ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি ৮২টি রয়েছে। একমাত্র ‘জি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি ছিল লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, যা বর্তমানে লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট নামে একীভূত।
শ্রেণীকরণের পূর্বে
দেশে ডিমেট শেয়ারের লেনদেন শুরু হয় ২০০৪ সালে, যা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির লেনদেন চালু করে। ১৯৯৮ সালে ডিএসইতে অটোমেশন চালু হলেও, ডিমেট শেয়ারের অভাবে সে সময় কাগুজে শেয়ারেই লেনদেন হতো।