আক্কাছ আলী (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি:
মুন্সীগঞ্জের দিঘীরপাড়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল এখন চরের মানুষের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে। নদীর পাড় থেকে চর পাড়ি দেওয়া কিংবা মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোর জন্য দুই চাকার এ বাহন বেকার যুবকদের আয়ের পথ খুলে দিয়েছে।
দিঘীরপাড়ের নদীর ঘাটে নৌকা ভিড়তেই শুরু হয় চালকদের হাঁকডাক, “যাবেন নাকি?” যাত্রীরা উঠে পড়েন, তারপর বাইকগুলো ধুলো উড়িয়ে ছুটে চলে বালুর পথে। বর্তমানে এ অঞ্চলে অন্তত তিন শতাধিক মোটরসাইকেল চালক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
যুবকদের কর্মসংস্থান ও চরের ভরসা
দিঘীরপাড় ইউনিয়নের মোটরসাইকেল চালক আল-আমিন জানান, প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১,০০০ টাকা আয় হয়। খরচ বাদ দিলে হাতে থাকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। তবে কাজটি সহজ নয় বলে জানান তিনি। “বালুময় রাস্তায় বাইক চালাতে খুব কষ্ট হয়। পুরো শরীর ধুলোয় ঢেকে যায়। তবু এটাই আমাদের আয়ের একমাত্র পথ,” বলেন তিনি।
শরীয়তপুরের নওপাড়ার কামাল শেখ জানান, মোটরসাইকেল সেতুবন্ধনের কাজ করছে। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, এবং চাঁদপুরের মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারছেন। আগে নৌকায় সময় বেশি লাগত, কিন্তু এখন মোটরসাইকেলে দ্রুত যাতায়াত সম্ভব।
দিনরাত চলছে সেবা
চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন চলে। জরুরি প্রয়োজনে মধ্যরাতেও চালকরা সেবা দেন। যাত্রী সংখ্যা এবং পথ অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাবাজারের আসিক টালী জানান, গত ১০ বছর ধরে তিনি এই কাজে যুক্ত। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই ঘাট ব্যবহার করেন। আইনি সহায়তা, চিকিৎসা, বা বাজার সদাই করতে চরের মানুষকে মূল ভূখণ্ডে যেতে হয়।
যাত্রীদের অভিজ্ঞতা
স্থানীয় শরিফুল ইসলাম জানান, এক রাতে প্রসবজনিত ব্যথায় স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিতে হয়। তিনি বলেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এমন দুর্ভোগ আর পোহাতে হতো না।”
অপরদিকে কিরণ নামের এক অটোচালক বলেন, “মোটরসাইকেলের কারণে চরের মানুষ এখন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। কোর্ট ও হাসপাতালের যাত্রীই বেশি হয়।”
যোগাযোগ ব্যবস্থার দাবি
চরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি—একটি সেতু ও পাকা রাস্তা। টঙ্গীবাড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আরিফুল ইসলাম হালদার বলেন, “সেতু ও পাকা রাস্তার অভাবে মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। সেতু নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানতে পেরেছি।”
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম জানান, নদীর পশ্চিম পাশে চার কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষ দৃষ্টিকোণ:
দিঘীরপাড়ে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর মধ্য দিয়ে যুবকদের জীবনে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কাটবে না। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি।