আক্কাছ আলী, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি :
দেশের অন্যতম বৃহৎ আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সিগঞ্জে এ মৌসুমে আলু বিপণনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সরকার নির্ধারিত কেজিপ্রতি ২২ টাকায় আলু বিক্রি সম্ভব না হওয়ায় কৃষক ও পাইকার উভয়েই লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন। জেলার বিভিন্ন হিমাগারে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আলু মজুদ থাকলেও চাহিদার অভাবে ক্রয়-বিক্রয় কার্যত বন্ধ হয়ে আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে মুন্সিগঞ্জে ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন, যা গত বছরের তুলনায় ৫২ হাজার মেট্রিক টন বেশি। জেলার ৭৪টি হিমাগারের মধ্যে সচল রয়েছে ৫৮টি, যেগুলোর ধারণক্ষমতা ৫ লাখ মেট্রিক টন। ফলে অর্ধেকেরও বেশি আলু সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি।
কৃষকদের অভিযোগ, এক কেজি আলু উৎপাদনে ১৬–১৮ টাকা খরচ হয়েছে। পরিবহন, শ্রমিক মজুরি ও হিমাগার ভাড়া যোগ করলে সেই ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২৬–২৮ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, আর হিমাগার থেকে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২–১৪ টাকায়। সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি সম্ভব না হওয়ায় অনেক কৃষক লোকসানের ভয়ে আলু ছাড়ছেন না।
হিমাগার মালিকরা বলছেন, শুধু দাম বেঁধে দিলে হবে না, চাহিদা তৈরি করতে হবে। অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।
জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, “দেশের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরোনো আলু টিকবে, মার্চে আবার নতুন আলু আসবে। এ অবস্থায় রপ্তানিই একমাত্র সমাধান।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, গত বছর দেশে ১ কোটি ৬ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ মেট্রিক টনে। অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে সারা দেশের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, “চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। টেকসই সমাধানের জন্য রপ্তানি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”