December 22, 2024, 11:16 pm
শিরোনাম :
বশেমুরবিপ্রবিতে ছাত্র আন্দোলনে উস্কানিদাতা উপ-রেজিস্ট্রার গ্রেফতার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তদান সংগঠন “ব্রুবা”র উদ্বোধন মুন্সীগঞ্জ গজারিয়ায় পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা বগুড়ার ধুনটে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী থেকে ছেলে রূপান্তর: নাম রাখা হয়েছে ওমর ফারুক শ্রাবণ টঙ্গিবাড়ীতে বিক্রমপুর মুন্সীগঞ্জ কল্যাণ সমিতির শীতবস্ত্র বিতরণ মুন্সীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ: ৫ জন গুলিবিদ্ধ, আহত ১০ গাজীপুরে বোতাম কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ !! বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটিতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ আজ বছরের দীর্ঘতম রাত

কোরআনের বর্ণনায় কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে ?

মোঃ নিজামুল ইসলাম

মানবরচিত মতবাদ অন্য ক্ষেত্রের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়েও চরম হোঁচট খেয়েছে। কেউ বলে, হুকুমতের উদ্দেশ্য অধিকার আদায়। অথচ অধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নির্ধারণে তা ব্যর্থ। কেউ বলে, হুকুমতের উদ্দেশ্য কেবল সুখ অর্জন।

অথচ সুখ একটি অস্পষ্ট শব্দ এবং রুচির ভিন্নতার বিচারে ভিন্ন ভিন্ন বস্তুতে সুখ লাভ হতে পারে। অপরাধীর সুখ অর্জন হয় অপরাধ করে। তাই ইসলাম রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে বয়ান করেছে। কোরআন কারিমে এসেছে, ‌‌‘এরা ওই সব লোক, যদি আমি তাদের ভূপৃষ্ঠে ক্ষমতা অর্পণ করি, তাহলে তারা নামাজ কায়েম করবে; জাকাত আদায় করবে; সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বারণ করবে।(সুরা : হজ : আয়াত : ৪১)

কোরআনে কারিম স্পষ্ট করে দিয়েছে যে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের মৌলিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের অন্যতম হলো শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন। কোরআনে কারিমের বর্ণিত লক্ষ্যগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে দেখা যাবে, প্রকৃতপক্ষে সেগুলোই হুকুমতের আসল লক্ষ্য পূরণ করতে পারে। যুগের বিবর্তনে এগুলোর বৈশিষ্ট্যে কোনো পরিবর্তন সাধন হয় না। এখানে প্রতিটি উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা দেওয়া হলো :
নামাজ কায়েম করা।

মানবসমাজকে একটি সুশৃঙ্খল নিয়মনীতির আওতায় আনার জন্যই হুকুমত প্রয়োজন।
আর এ কথা স্পষ্ট যে শুধু ডাণ্ডার জোরে মানুষকে নিয়মনীতির আওতায় আনা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন তাদের মানসিকভাবে প্রশিক্ষণ। আর এর সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হচ্ছে তাদের দিলে আল্লাহ তাআলার সামনে উপস্থিতি ও নিজের সব কাজের জবাবদিহির অনুভূতি সৃষ্টি করা। কারণ এই অনুভূতিই মানুষকে রাতের আঁধারে এবং নির্জনতায়ও নজরদারিতে রাখে। এই অনুভূতি সর্বদা জাগ্রত রাখার জন্য নামাজের পাবন্দি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এ জন্যই সৎ শাসকদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজ কায়েমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজকে দ্বিনের স্তম্ভ বলেছেন; সাহাবায়ে কেরামের দীক্ষার বেলায় সবার আগে রেখেছেন নামাজকে। সর্বদা নিজে নামাজের ইমামতি করেছেন এবং জীবন-পরিক্রমার সর্বশেষ দিনে নিজে ইমামতি করতে পারছিলেন না; কিন্তু সিদ্দিকে আকবর (রা.)-এর নেতৃত্বে মানুষজনকে নামাজ পড়তে দেখে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। তারপর খুলাফায়ে রাশেদিন, যাঁদের হুকুমত রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ, তাঁদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব ছিল নামাজের। খুলাফায়ে রাশেদিন অধীনদের নামাজের ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপের জন্য শুধু নির্দেশই দেননি; বরং তাদের পদবিগত কর্তব্যসমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য সাব্যস্ত করেছেন। খলিফা উমর (রা.) গভর্নরদের এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, আপনাদের কাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নামাজ। এ জন্য যে ব্যক্তি নামাজের হেফাজত করবে এবং তার পাবন্দি করবে, সে তার দ্বিন হেফাজত করবে; আর যে নামাজ বরবাদ করবে, তার অন্যান্য কাজ আরো বেশি বরবাদ হবে।
(মুআত্তা মালেক : হাদিস : ৬)
এর কারণ হলো, ইসলামে রাজনীতি হোক, অর্থনীতি হোক, অথবা ইহলৌকিক অন্য কোনো বিষয়ই হোক, সেটাকে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক এবং মানুষের আত্মিক দীক্ষা থেকে আলাদা করা যায় না। নামাজ মানুষের দিলে তার একেকটি কথা ও কাজ সেই সত্তার গোচরীভূত হওয়ার চিন্তা সৃষ্টি করে, যার কাছে শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে হবে। এই চিন্তাই মানুষকে মানুষ বানায় এবং তার কর্মকাণ্ড নিয়ম-শৃঙ্খলার অধীন রাখে। এ জন্যই কোরআন বলছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ বেহায়াপনা ও মন্দাচার থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বাধিক বড় বিষয়।’
(সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
এসব কারণেই কোরআনে কারিম রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে সর্বাগ্রে নামাজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছে।
জাকাত সংগ্রহ ও তার সুষ্ঠু বিতরণ
রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো জাকাত আদায়। এর কারণ প্রথমত, রাষ্ট্র যেন আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনার্থে দরিদ্র জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করে। দ্বিতীয়ত, মানুষের বদ আমলের একটি বড় কারণ হচ্ছে সম্পদের ভালোবাসা। জাকাত এই ভালোবাসার নিয়ন্ত্রণ এবং স্বেচ্ছাচারিতার বদলে ত্যাগের উদ্দীপনা সৃষ্টির অনেক বড় মাধ্যম। তৃতীয়ত, নামাজ যে রকম মানুষের সত্তাগত কর্মকাণ্ডে এখলাস ও রুহানিয়াত সৃষ্টি করে, তেমনি জাকাতও তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে একনিষ্ঠতা ও আধ্যাত্মিকতা সৃষ্টি করে।

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের বারণ
রাষ্ট্র পরিচালনার তৃতীয় বড় উদ্দেশ্য হলো, সৎ কাজের হুকুম প্রদান এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করা। এমনিতে তো এক পর্যায়ে তা প্রত্যেক মুসলমানেরই কর্তব্য। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সেই উত্তম জাতি, যাকে মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে, অসৎ কাজ থেকে বারণ করবে এবং ঈমান রাখবে আল্লাহর ওপর।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)
তবে হাদিসে এর স্তরবিন্যাস রয়েছে। বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ অন্যায় হতে দেখলে হাতের সাহায্যে তা বদলে দেবে। যদি সেই সামর্থ্য না থাকে, তাহলে মুখের সাহায্যে। এর সামর্থ্যও না থাকলে মনেপ্রাণে সেটাকে ঘৃণা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৬)
আর হাতের সাহায্যে মন্দের প্রতিরোধের সম্বোধন ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গের প্রতি। কিছু আলেম বলেন, অন্যায় কাজ হাত দ্বারা প্রতিরোধের দায়িত্ব ক্ষমতাশালীদের, জবান দ্বারা করার দায়িত্ব আলেমদের, আর অন্তর দ্বারা করবে সর্বসাধারণ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩৫৩)
ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
কোরআনের বর্ণনায় রাষ্ট্র পরিচালনার পঞ্চম উদ্দেশ্য ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘হে দাউদ। আমি তোমাকে দুনিয়াতে খলিফা নিযুক্ত করেছি, অতএব তুমি লোকসমাজে ন্যায়বিচার করো এবং প্রবৃত্তির পেছনে পোড়ো না।’
(সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ২৬)
এখানে খিলাফতের মৌলিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও পদবীয় কর্তব্যের মধ্যে জনসাধারণের সঙ্গে ইনসাফের আচরণ করা অন্তর্ভুক্ত। এই ইনসাফের মধ্যে বিচারিক ন্যায়পরায়ণতা যেমন শামিল, তেমনি নির্বাহী বিধি-বিধান ন্যায়পরায়ণতার ওপর প্রতিষ্ঠা করাও শামিল।

ন্যায় ও ইনসাফের মাপকাঠি
এখানে স্পষ্ট হওয়া জরুরি যে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের ব্যাখ্যা যেকোনো ব্যক্তি নিজের বুঝ মোতাবেক স্থির করতে পারে; কিন্তু কোরআনে কারিমের পরিভাষায় শুধু সেটাই ইনসাফ, যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) ইনসাফ বলে স্বীকৃতি দেন। ইনসাফের যে ব্যাখ্যা আল্লাহ ও রাসুলের বিধি-নিষেধের খেলাফ, সেটা ইনসাফ নয়; সেটা প্রবৃত্তির গোলামি। সেটাকেই উক্ত আয়াতে অন্যায় ফায়সালা হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা সেই বিধান মোতাবেক ফায়সালা করবে না, যা আল্লাহ নাজিল করেছেন, তারাই জালিম।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৫)
এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, ‘যদি আপনি তাদের মধ্যে ফায়সালা করেন, তাহলে ইনসাফের সঙ্গে ফায়সালা করবেন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪২)
সারকথা, মুখের ভাষায় তো যেকোনো সরকারব্যবস্থাই ইনসাফ কায়েমের দাবি করে, এবং নিজের গৃহীত কর্মপন্থাকে হক ও ইনসাফ মনে করে; কিন্তু প্রকৃত ইনসাফ হচ্ছে সেটা, যাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.) ইনসাফ সাব্যস্ত করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের আগে যারা অতিবাহিত হয়েছে, তারা ধ্বংস হয়েছে এ কারণে যে তাদের মধ্য থেকে যখন কোনো বড়লোক চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত; আর যখন কোনো দুর্বল চুরি করত, তখন তারা তাকে শাস্তি দিত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মদের মেয়ে ফাতিমাও চুরি করে, তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দেব।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৭৫)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


আমাদের পেজ লাইক করুন