যে সুরা নিয়মিত পাঠ করলে জানাজায় ফেরেশতারা শরীক হয়
আল কোরআন মহান আল্লাহর পবিত্র কালাম। এর প্রত্যেকটি সুরা বা আয়াত দামী। কোনো কোনো আয়াত বা সুরা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। একটি সুরার ব্যাপারে বলা হয়েছে, ওই সুরার প্রতি অন্তর ভালোবাসা থাকলে, সেটাই তার জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের কারণ হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! ওই সুরাটিকে কেউ মহব্বত করলে তাকে আল্লাহও মহব্বত করেন, ক্ষমা করে দেন। এমনকি মৃত্যুর পর তার জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য আসমানের ফেরেশতারা পর্যন্ত ছুটে আসার প্রমাণ পাওয়া যায় হাদিস শরিফে। সেই সুরাটি কী? সেটি হলো সুরা ইখলাস।
অধিক পরিমাণে সুরা ইখলাস পাঠকারীর জানাজায় ফেরেশতাদের আগমণ
হজরত মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আলমুযানি আললাইছি (রা.) ইন্তেকাল করলে ৭০ হাজার ফেরেশতাসহ জিবরাইল (আ.) নবীজির কাছে আগমন করেন। মহানবী (স.) জিবরাইল (আ.) এবং এসব ফেরেশতাদের নিয়ে তাঁর জানাজায় শরিক হন। নামাজ শেষ হলে নবীজি (স.) জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে জিবরাইল! কোন আমলের মাধ্যমে মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া মুযানি এই উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে? জবাবে জিবরাইল (আ.) বলেন, এই মর্যাদা লাভের কারণ হলো- সে দাঁড়িয়ে, বসে, হেঁটে হেঁটে, সওয়ারিতে (বাহনে চড়া অবস্থায়) তথা সর্বাবস্থায় সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করত। (মুজামে কাবির: ৮/১১৬, হাদিস ৭৫৩৭; মুজামে আওসাত, তবারানি )
আরেক বর্ণনায় এসেছে, নবীজি জিজ্ঞেস করেছেন, হে জিবরাইল! কোন আমল দ্বারা মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আল্লাহর নিকট এই মর্যাদা লাভ করেছে? জিবরাইল (আ.) উত্তর দিয়েছেন, এর কারণ হলো, সে সুরা ইখলাসকে মহব্বত করত এবং চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে সর্বাবস্থায় এই সুরা তেলাওয়াত করত। (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৪২৬৮)
সুরা ইখলাস পাঠকারীর জন্য জান্নাতে বিশেষ প্রাসাদ নির্মাণ
মুআজ ইবনে আনাস জুহানি (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার পড়বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। এ কথা শুনে উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক প্রাসাদের অধিকারী হয়ে যাব (অর্থাৎ অধিক হারে এই সুরা পাঠ করব। ফলে আল্লাহ আমাদের অনেক প্রাসাদ দান করবেন)। রাসুল (স.) বললেন, আল্লাহ তাআলার দান আরো প্রশস্ত, আরো উত্কৃষ্ট। (মুসনাদে আহমদ: ১৫৬১০)
সুরা ইখলাস পাঠকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন
যারা সুরা ইখলাস বেশি বেশি পাঠ করবে তারা আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জন করতে পারবে। আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (স.) কিছু সাহাবিকে যুদ্ধে পাঠালেন। তাদের একজনকে সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। তিনি যুদ্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে শুধু সুরা ইখলাস দিয়ে নামাজ পড়িয়েছেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পর সাহাবিরা নবী (স.)-কে বিষয়টি জানান। তখন নবী (স.) তাদের বলেন, তোমরা তাকে জিজ্ঞেস করো—কেন সে এরূপ করেছে? সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলে সেনাপতি জবাব দিলেন, এ সুরায় আল্লাহর গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। তাই আমি এ সুরাকে ভালোবাসি। নবী (স.) তখন সাহাবিদের বলেন, তোমরা তাকে বলো, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। (বুখারি: ৭৩৭৫)
সুরা ইখলাস কোরআনের এক তৃতীয়াংশ সমমর্যাদার
একাধিক হাদিসে এসেছে, সুরা ইখলাস কোরআন মাজিদের তিন ভাগের এক ভাগের সমান মর্যাদা রাখে। যে ব্যক্তি একবার এই সুরা তেলাওয়াত করবে সে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সওয়াব লাভ করবে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে রাতে বারবার সুরা ইখলাস পড়তে শুনেছেন। অতঃপর সকালে নবী (সা.)-কে এ বিষয়টি অবহিত করা হয়। তখন নবী (স.) বলেন, ওই সত্তার শপথ! যার কুদরতি হাতে আমার জীবন, অবশ্যই এ সুরা কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারি: ৫০১৩)
সুরা ইখলাস পাঠে ক্ষমার ঘোষণা
আবুল হাসান মুহাজির (রহ.) বলেন, জনৈক সাহাবি বর্ণনা করেছেন, তিনি নবীজির সঙ্গে এক সফরে ছিলেন। (একদিন তাঁর কাছে এমনভাবে বসা ছিলেন যে) তার হাঁটু দুটি নবীজির হাঁটুদ্বয়ের সঙ্গে লেগে ছিল। এ অবস্থায় এক লোককে শুনলেন, সুরা কাফিরুন তিলাওয়াত করছে। তা শুনে নবী (স.) বললেন, সে শিরক থেকে পবিত্র হয়ে গেছে। আরেক লোককে শুনলেন, সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করছে। তখন তিনি বলেন, তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে। (সুনানে দারেমি: ৪৩৬৯)
সুরা ইখলাস পাঠে জাহান্নাম থেকে মুক্তি
নবীজি (স.)-এর যুগে এক সাহাবি মসজিদে কোবায় ইমামতি করার সময় প্রতি রাকাতে আবশ্যিকভাবে সুরা ইখলাস পড়তেন। নবীজি তাকে ডেকে জানতে চাইলেন, প্রতি রাকাতে আবশ্যিকভাবে সুরা ইখলাস পড়ার কারণ কী? সাহাবি জবাব দিলেন, আমি সুরা ইখলাসকে মহব্বত করি। তার জবাব শুনে নবী (স.) বললেন, সুরা ইখলাসের প্রতি তোমার এই মহব্বত তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে। (তিরমিজি: ২৯০১)
জান্নাত লাভের সুসংবাদ
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আমি নবীজির কাছে বসা ছিলাম। এক লোক এসে বলল, আমার এক ভাই এই সুরা (সুরা ইখলাস) পড়তে ভালোবাসে। নবী করিম (স.) বলেন, ‘তোমার ভাইকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।’ (আলকামেল, ইবনে আদি: ২/৩৯০)
সুরা ইখলাসের এত মর্যাদার কারণ কী
সুরা ইখলাস মানুষকে শিরক থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র মহান আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা দেয়। সুরাটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো- রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহ তাআলার শেখানো ভাষায় তাঁর পরিচয় তুলে ধরেছেন। যে পরিচয় তুলে ধরতে আল্লাহ তাআলা নিজেই এ সুরাটি নাজিল করেছেন। এ সুরার মতো কোনো সুরায় আল্লাহর একত্ত্ববাদের বিষয়টি বর্ণিত হয়নি। এই সুরায় ৪ আয়াতের মাধ্যমে ৪টি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তা হলো- ১. আল্লাহ এক ২. তিনি অমুখাপেক্ষী ৩. তিনি কারো জনক নন আবার তাকে কেউ জন্ম দেননি অর্থাৎ তিনি জন্ম নেওয়া-দেওয়া থেকে পূত-পবিত্র এবং মুক্ত ৪. তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি সুরা ইখলাস পাঠের তাওফিক দান করুন। আমিন।