মাসফিকুল হাসান, বেরোবি প্রতিনিধি:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মাস্টার্স ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশীকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও প্রফেসর ড. রুহুল আমিনের একটি কোর্সে তিনি পাস করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর আর আসেননি। ওই সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ তোলা হয়।
ঐশীর ব্যাচমেটদের দাবি, মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের বেশিরভাগ পরীক্ষা জুলাইয়ের আগেই অনুষ্ঠিত হলেও প্রফেসর ড. রুহুল আমিনের একটি কোর্স, “কমিউনিটিভ আলজেব্রা” (বিষয় কোড ৫১০২)-এর মিড টার্ম পরীক্ষা তখন হয়নি। ঐশী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও ২১ নম্বর পেয়েছেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।
একজন ব্যাচমেট ইমরান বলেন, “শহীদ আবু সাঈদের হত্যায় ছাত্রলীগের ভূমিকা রয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই, এমন নেত্রীরা ক্যাম্পাসে কোনো সুযোগ না পায়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হবে।”
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কোর্স শিক্ষক প্রফেসর ড. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, “আমি পরীক্ষা জুলাই-আগস্টের আগে নিয়েছি। মিড টার্ম পরীক্ষা মে মাসেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।” যদিও প্রতিবেদকের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, পরীক্ষাটি ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ঐশী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মো. হান্নান মিয়া জানান, “কোর্স টিচাররা আমাদের কাছে রেজাল্ট পাঠান, আমরা সেটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে প্রেরণ করি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।”
গণিত বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. কমলেশ চন্দ্র রায় বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঐশীকে বিভাগে দেখিনি, তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও হয়নি। বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়েছে।”
এদিকে সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের এই নেত্রীর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। অন্যথায় ক্যাম্পাসে আরও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।