আক্কাছ আলী, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
আলু উৎপাদনে দেশের শীর্ষ জেলাগুলোর একটি মুন্সীগঞ্জ। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে জেলার ৩৪,৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে, উৎপাদনের সম্ভাব্য পরিমাণ প্রায় ১০.৫ লাখ মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ১২-১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা, যেখানে খুচরা বাজারে দাম ১৮-২০ টাকা। কৃষকদের অভিযোগ, টাকার অভাবে তারা হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না, ফলে মধ্যসত্ত্বভোগীরা সস্তায় কিনে পরে চড়া দামে বিক্রির সুযোগ নিচ্ছে।
কৃষকদের দাবি ও সরকারের উদ্যোগ
কৃষকরা বলছেন, ৭০০ টাকা কেজি দরে বীজ আলু রোপণ করেও এখন পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। হিমাগার ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের উদ্যোগ থাকলেও, অনেকেই আর্থিক সংকটে আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না। গেল মৌসুমে সংরক্ষিত আলুর দাম ৮০-৯০ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠেছিল, যা মধ্যসত্ত্বভোগীদের লাভবান করেছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মধ্যসত্ত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১২০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচির আওতায়—
✅ কৃষকরা এনআইডি দিয়ে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।
✅ ব্যবসায়ীদের জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
✅ ৬৪টি হিমাগারের মধ্যে সচল ৫৮টি হিমাগারের কার্যক্রম নজরদারিতে আনা হবে।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম জানান, “হিমাগারগুলোর জন্য একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে প্রতিদিনের সংরক্ষিত আলুর তথ্য পাওয়া যায়।” এছাড়া, হিমাগার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হবে।
অন্যদিকে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, “আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারিভাবে কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বীজ আলু ও খাবার আলু আলাদাভাবে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
কৃষি পর্যায়ে পরিবর্তন ও সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ ও স্বচ্ছ নীতিমালা নিশ্চিত করা গেলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবেন। অন্যথায়, মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত উৎপাদনকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখতে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি।