মোঃ জাহিদুর রহিম মোল্লা, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
এক সময়ের প্রাচুর্যময় রাজবাড়ী জেলার নদ-নদী, খাল-বিল ও পুকুর-জলাশয়গুলোতে যেসব দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত, সেগুলোর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। খয়রা, পুঁটি, কৈ, শিং, মাগুরসহ বহু দেশীয় মাছ আজ বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয়দের মতে, আগে বাজারে টেংরা, টাকি, গুঁটি, শোল, গজার, বোয়াল, বাইম, চিংড়ি— এসব মাছ সহজলভ্য ছিল। এখন এসব মাছ পাওয়া খুবই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। পরিচিত দেশীয় মাছগুলো আজকের প্রজন্মের কাছে যেন রূপকথার গল্পের মতো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, খাল-বিল ভরাট, মা মাছ নিধন, ফসলি জমিতে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ, কারেন্ট জালের অপব্যবহার, জলাশয় দূষণসহ নানা কারণে দেশীয় মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় মৎস্যচাষিরা জানান, দেশীয় মাছ সংরক্ষণের জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। পুকুরে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ, মা মাছ ধরা এবং বিদেশি প্রজাতির মাছের প্রতি চাষিদের ঝোঁক দেশীয় মাছের প্রজননে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পরিতোষ সরকার বলেন, “আমরা ছোটবেলায় শোল, বোয়াল, গজার, বাইম মাছ ধরতাম। এখন এসব মাছ চোখেই পড়ে না। নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাছের বিচরণ ও প্রজননের স্থান সংকুচিত হয়ে পড়েছে।”
স্থানীয় সমাজকর্মী ও মৎস্যপ্রেমী ফিরোজ মন্ডল, মাছুদ মন্ডল, শশধর ঘোষ, নিখিল বসু, মোকাদ্দস মোল্লা, সরজিত সরকার, ফরহাদ হোসেনসহ আরও অনেকে বলেন, “প্রজনন মৌসুমে অভয়াশ্রম ঘোষণা, বর্ষাকালে পোনা মাছ ছাড়া এবং ব্যাপক সচেতনতা বাড়ালেই দেশীয় মাছের উৎপাদন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।”
এদিকে বাজারে এখন তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ, নাইলোটিকা, আফ্রিকান মাগুর, সিলভার কাপ, গ্রাস কার্পসহ বিদেশি মাছের আধিপত্য। অধিক লাভের আশায় চাষিরা দেশীয় মাছের পরিবর্তে এসব বিদেশি প্রজাতির মাছ চাষ করছেন।
মাছ বিক্রেতা শহিদ বিশ্বাস জানান, বর্তমানে বাজারে দেশি মাছ খুবই কম। মূলত সরপুটি, পাঙ্গাশ, রুই-কাতলা, তেলাপিয়াই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু মাছ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় এবং দীর্ঘক্ষণ তাজা রাখার জন্য ফরমালিন ব্যবহৃত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
সচেতন মহল মনে করছেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামী প্রজন্ম দেশীয় মাছ চিনতেই পারবে না। নদী-নালা খনন, জলাশয় সংরক্ষণ, মা মাছ রক্ষায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, অভয়াশ্রম সৃষ্টি এবং দেশি মাছের চাষে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
তথ্য ও সচেতনতাই পারে বিলুপ্তির হাত থেকে দেশীয় মাছগুলোকে রক্ষা করতে— এমনটাই প্রত্যাশা প্রবীণ এলাকাবাসীর।