বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি: রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত নাকি সাংবিধানিক সংকটের নতুন অধ্যায়?
বাংলাদেশে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও সংবিধান বাতিলের দাবিতে সরব হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারা ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকও করছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে, অনেকেই প্রশ্ন করছেন–এই পদক্ষেপ কি সত্যিই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত নাকি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে আরো সাংবিধানিক সংকটে ফেলবে?
রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও রাজনৈতিক বিতর্ক
রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণের দাবি তুলে সরকারবিরোধী এই গোষ্ঠীগুলো সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির পথে এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলো। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি আসন্ন নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল হতে পারে।
তবে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার বা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা নয়, বরং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তোলা।”
নতুন রাজনৈতিক দল ‘কিংস পার্টি’ গঠনের গুঞ্জন
এদিকে আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে থেকেই নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের গুঞ্জন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, এটি হতে পারে “কিংস পার্টি” নামে কোনো দল গঠনের সূচনা। যদিও সরকারি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের কোনো দল গঠনের পরিকল্পনা নেই। ছাত্রদের উদ্যোগ একটি জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রয়াস, এর সাথে রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো সম্পর্ক নেই।”
নাগরিক কমিটি: প্রেশার গ্রুপ নাকি রাজনৈতিক শক্তি?
জাতীয় নাগরিক কমিটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তুলছে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সংগঠনের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “আমরা চাই তরুণদের ক্ষমতায় আনতে। তবে রাজনৈতিক দল গঠন আমাদের এই প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য নয়।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্র ও নাগরিক আন্দোলন যদি সত্যিই দল গঠনের দিকে এগোয়, তা আগামী দিনের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
ভবিষ্যৎ রাজনীতি: দল গঠনের প্রস্তুতি নাকি জাতীয় ঐক্যের প্রয়াস?
ছাত্র ও নাগরিক আন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি ও রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনা ঘিরে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। তাদের বর্তমান দাবি ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কতটা সফল হবে এবং তা কি দলীয় রূপ নেবে নাকি প্রেশার গ্রুপ হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।