নিজস্ব প্রতিবেদন :
মলিন ও বিবর্ণ হয়ে যাওয়া দেয়ালে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে কিসমত মাড়িয়া মসজিদ। এটি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। ঐতিহ্যে ঘেরা বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম মসজিদ। আনুমানিক ১৫০০ সালে এটি নির্মিত হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
রাজশাহী মহানগরী থেকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক ধরে প্রায় ১৩ কিলোমিটার গেলে শিবপুর বাজার নামক স্থান থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের সাইনবোর্ড ধরে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার গেলে এই মসজিদ পাওয়া যাবে। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের অন্তর্ভুক্ত হলেও আজ পর্যন্ত এর কোনো রক্ষণাবেক্ষণ বা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। আমবাগান আর ফসলের ক্ষেত বেষ্টিত এ মসজিদটি সম্পর্কে গ্রামের মানুষের মধ্যে অনেক কিংবদন্তী কাহিনী প্রচলিত আছে।
এ মসজিদ সম্পর্কে সঠিক কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবুও নির্মাণশৈলী দেখে অনুমান করা হয় মসজিদটি আনুমানিক ১৫০০ সালে স্থানীয় কোনো মুসলিম দরবেশ বা দিল্লির মুঘল শাসকদের নির্দেশে কোনো জমিদার কর্তৃক নির্মিত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদটির ক্ষয়ে যাওয়া দেয়ালে এখনো কিছু শৈল্পিক কর্ম বিদ্যমান। মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে শিল্পীদের করা পোড়ামাটির টেরাকোটা যা গাছ-ফুল-লতা ইত্যাদি ধারণ করেছে। এগুলো মসজিদের সৌন্দর্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। তৎকালীন হিন্দুপ্রধান এ এলাকায় মুসলিমদের সংখ্যা কম হওয়ায় এ মসজিদটি আকারে বেশ ছোট।
মসজিদটির তিনটি প্রবেশদ্বার আছে। প্রত্যেকটি দ্বারের ঠিক সমান্তরালে ওপরে ছাদের মাঝামাঝি একটি করে গম্বুজ আছে। মসজিদটির সামনে লাগোয়াভাবে ছোট্ট উঁচু উঠান (খোলা বারান্দা) আছে যা অনুচ্চ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত এবং একটি তিন ধাপী ছোট সিঁড়ি দ্বারা ভূমিতে সংযুক্ত। এর দক্ষিণে একটি দ্বিতল চৌচালা স্থাপনা আছে যা বিবির ঘর বলে পরিচিত আছে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। পুরো স্থাপনাটা নির্মিত হয়েছে চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে। দেশের অন্যান্য পুরাতন মসজিদের সাথে এই মসজিদের একটি সাধারণ ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়, তা হলো মসজিদটির একেবারে সন্নিকটে কোনো বড় জলাধার বা পুকুর-দীঘি নেই।
স্থানীয় রহমান আলী নামে এক মুসল্লি প্রতিবেদকে বলেন, এই মসজিদে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নামাজ পড়ছি। এখানে নামাজ পড়তে এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে।
মসজিদের খতিব ও ইমাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন এ মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন, এই এলাকায় এমন ঐতিহাসিক মসজিদ আর নেই। তাই দ্রুত এর রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
আশেপাশের লোকজন ও ভ্রমনপ্রিয় মানুষ এ মসজিদে নামাজ আদায় করেন। মসজিদটি এখনো পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় স্মারক। প্রতিদিন দেশী-বিদেশী পর্যটক মসজিদটি পরিদর্শনে আসেন।#
মহ/ দৈনিক বাংলার তরী