তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য রোল মডেল: এস এ জাহিদ
বগুড়া প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় জন্ম নেওয়া এস এ জাহিদ এখন তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম। জীবনযুদ্ধে নানা প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে তিনি বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজস্ব ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। ২০২৪ সালের জাতীয় যুব দিবসে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর তাকে সফল আত্মকর্মী ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম পুরস্কারে ভূষিত করে।
পিতা নুরুজ্জামান সরকার একজন শিক্ষক এবং মাতা সুলতানা রাজিয়া। তাদের স্বচ্ছলতাহীন পরিবারেই বেড়ে ওঠেন জাহিদ। ২০০৭ সালে পড়াশোনার পাশাপাশি মাত্র ৫০০ টাকা বেতনে পার্টটাইম চাকরি শুরু করেন তিনি। জীবনযুদ্ধে হাল না ছেড়ে তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
মৎস্য চাষ থেকে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম:
২০১৭ সালে অল্প পুঁজিতে দুটি পুকুর নিয়ে মৎস্য চাষ শুরু করলেও শুরুতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। এরপর বগুড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের এক মাসব্যাপী মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে উন্নত পদ্ধতিতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন। তারপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
মৎস্য চাষে সাফল্যের পর তিনি লাল মরিচ এবং সরিষার তেলের চাহিদা দেখে একটি কারখানা গড়ে তোলেন। এর পাশাপাশি একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেন, যার মাধ্যমে তিনি সারা দেশে হোম ডেলিভারি সেবা প্রদান করছেন।
রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা:
দেশের সংস্কার এবং উন্নয়ন চিন্তা থেকে এস এ জাহিদ যোগ দিয়েছেন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)-তে। তিনি বর্তমানে পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সহকারী সদস্য সচিব এবং বগুড়া জেলা শাখার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জাহিদের সাফল্যের গল্প:
জাহিদ বলেন, ‘‘আমার যাত্রা ছিল স্বপ্নের মতো। শুরুতে ২-৩ জন পার্টনার থাকলেও তারা একে একে সরে যায়। তবে আমি দমে যাইনি। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ৪০ জন স্থায়ী কর্মী কাজ করছেন এবং অস্থায়ীভাবে আরও ৩০-৩৫ জন কাজ করছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০০ বেকার যুবক ও যুব-নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে আমার।’’
সমর্থন ও প্রেরণা:
নিজের সাফল্যের পেছনে পরিবারের ভূমিকা উল্লেখ করে জাহিদ বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা, বড় ভাই-বোন সব সময় আমাকে স্নেহ ও উৎসাহ দিয়ে পাশে থেকেছেন। তাদের প্রেরণা ছাড়া আমি এখানে আসতে পারতাম না। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা আমাকে পথ দেখিয়েছে। আমি তাদের কাছে চিরঋণী।’’
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য:
জাহিদ বলেন, ‘‘আমি আরও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে চাই এবং দেশ ও সমাজের উন্নয়নে বড় পরিসরে অবদান রাখতে চাই।’’
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এস এ জাহিদ প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম, এবং সঠিক দিকনির্দেশনার সমন্বয়ে সাফল্য অর্জন সম্ভব।