মো. সোহেল আলী, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
হিমেল হাওয়ার শীতলতায়, গ্রীষ্মের তপ্ত দিনে কিংবা বর্ষার প্রবল বর্ষণে, যে দৃশ্যটা ঠাকুরগাঁওয়ের রাস্তায় নজরে আসে—একটি মোটরসাইকেলে সরঞ্জাম
নিয়ে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত এক বৃদ্ধ। তিনি ৭১ বছর বয়সী খোরশেদ আলী। পেশায় পল্লিচিকিৎসক হলেও হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা লালন করেন পরিবেশের
জন্য।
মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে তালগাছ রোপণের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন খোরশেদ আলী। গত ১০ বছরে নিজের জমি বিক্রি করে তিনি রোপণ করেছেন
১ লাখ ১০ হাজার তালগাছ। এই তালগাছগুলো রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কেবল পরিবেশ রক্ষাই করবে না, শহীদের স্মৃতিও বয়ে নিয়ে যাবে।
খোরশেদ আলী বলেন, “তালগাছ রোপণ করি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে। বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছ অত্যন্ত উপকারী। আর এই গাছগুলো বাবুই পাখির
পুরোনো আবাস ফিরিয়ে এনেছে, যা দেখে মন ভরে যায়।”
খোরশেদ আলীর বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামে। সাত সন্তান ও দুই স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। পল্লিচিকিৎসা, কৃষিকাজ ও মসজিদের
ইমামতি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু নিজের সঞ্চয় ও জমি বিক্রির টাকা দিয়েই তালগাছ রোপণের কাজ চালিয়ে গেছেন।
তার ছেলে মোস্তফা ইসলাম বলেন, “প্রথমে বাবার এই কাজে বাধা দিলেও এখন গর্ব হয়। বাবার পরিশ্রমে রাস্তার ধারে গাছগুলো দাঁড়িয়ে পরিবেশের সৌন্দর্য
বাড়াচ্ছে।”
রেলগুমটি এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, “খোরশেদ আলীকে সবাই এখন বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে জানে। তিনি আমাদের গর্ব। এই তালগাছের সুফল
পরবর্তী প্রজন্ম পাবে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “তালগাছ ভূমিক্ষয় রোধ, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও বজ্রপাত প্রতিরোধে সহায়ক।
খোরশেদ আলীর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। কৃষি বিভাগ তাকে উৎসাহ দিচ্ছে।”
চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শোভা আলী বলেন, “তার মতো সাদামনের মানুষ বিরল। অভাব সত্ত্বেও তিনি যা করছেন, তা অনন্য।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরও বড় উদ্যোগ নিতে পারতেন।”
খোরশেদ আলীর এ উদ্যোগ শুধু পরিবেশ রক্ষা নয়, এটি একটি সমাজসেবামূলক দৃষ্টান্ত। তার তালগাছগুলো একদিন প্রজন্মের স্মৃতির মিনার হয়ে দাঁড়াবে।