July 13, 2025, 7:56 pm

গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি: সময়ের দাবি ও শিক্ষার্থীদের সহায়ক উদ্যোগ

Hussain Kabir

গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি: সময়ের দাবি ও শিক্ষার্থীদের সহায়ক উদ্যোগ

শিক্ষা একটি জাতির মৌলিক স্তম্ভ এবং এর সুষ্ঠু পরিচালনার মাধ্যমে একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে। এ লক্ষ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রবর্তিত গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপুল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য অশান্তি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। তবে, গুচ্ছ পদ্ধতির বহাল রাখার পক্ষে যুক্তিগুলো গভীরভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।

গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি: শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী ও কার্যকর গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা হলো এটি সময় এবং অর্থের সাশ্রয় করে। আগে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার ভ্রমণ করতে হতো, যা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল ও কষ্টকর ছিল। গুচ্ছ পদ্ধতিতে একটি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েই শিক্ষার্থীরা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারে। ফলে ভ্রমণ খরচ কমে এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। অবিভক্ত মানদণ্ডের সুযোগ গুচ্ছ পদ্ধতিতে একই মানদণ্ডে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করে এবং ন্যায্য মূল্যায়ন নিশ্চিত করে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক প্রশ্নপত্র এবং মানদণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার প্রস্তুতির চাপে পড়ে। গুচ্ছ পদ্ধতি এই চাপে লাগাম টানে এবং শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে। পড়ালেখার জন্য সময়ের অপচয় রোধ গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের একাধিক পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এটি তাদের জন্য সময় সাশ্রয় করে, যা তারা পড়াশোনা বা অন্য কোনো সৃজনশীল কাজে ব্যয় করতে পারে। পাশাপাশি, ভ্রমণজনিত ঝামেলা কমে এবং মানসিক চাপও হ্রাস পায়। গুচ্ছ পদ্ধতির বিকল্প: বিভ্রান্তিকর ও সমস্যাজনক কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে পৃথক ভর্তি পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে এবং তাদের অতিরিক্ত মানসিক চাপের মুখোমুখি করেছে।

একটি ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি অন্যটির সঙ্গে মিলিত হলে, শিক্ষার্থীরা কোনটিতে অংশগ্রহণ করবে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অত্যন্ত সমস্যাজনক হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের দাবি: গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল রাখা হোক শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ দাবি জানিয়েছে, গুচ্ছ পদ্ধতিকে বহাল রাখা হোক।

তারা মনে করে, এই পদ্ধতি দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় সমতা এবং ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক পরীক্ষা নিলে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক এবং মানসিকভাবে চাপ তৈরি করবে। গুচ্ছ পদ্ধতির ভবিষ্যৎ গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এটি শিক্ষার্থীদের আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিক চাপ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তবে এই পদ্ধতির কার্যকারিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের দাবি ও মতামত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় একটি সমন্বিত, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি বহাল রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। একটি জাতির ভবিষ্যৎ তার শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভর করে, আর শিক্ষার্থীদের স্বার্থে গুচ্ছ পদ্ধতিকে আরও শক্তিশালী করা উচিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


আমাদের পেজ লাইক করুন