সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বৈশ্বিক সহায়তা প্রকল্পে সাময়িক স্থগিতাদেশ আরোপ করেছে। এই আদেশে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র জরুরি সহায়তা ছাড়া বাকি সকল প্রকল্পে অর্থায়ন ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। তবে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে কিছু মহলে, বিশেষত, বাংলাদেশে ইউএসএইডের সহায়তা বন্ধ হওয়াকে কেন্দ্র করে।
আসলে এই সিদ্ধান্ত কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু কিছু মহল এটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার ফল হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। তবে, অতীতে আন্তর্জাতিক সহায়তা স্থগিতের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য এক বড় শিক্ষা হতে পারত, বিশেষত নির্বাচন পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।
২০১২ সালে, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (UNDP) অধীনে ইউএসএইড, ডিএফআইডি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উদ্যোগে “Strengthening Election Management in Bangladesh (SEMB)” নামে একটি প্রকল্প শুরু করা হয়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন পরিচালনায় সক্ষম করে তোলা। তবে, ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার কারণে এই প্রকল্পটি স্থগিত হয়।
দাতা সংস্থাগুলোর অবস্থান
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (EU) প্রকল্প বন্ধ করার বিষয়ে বলেছিল,
“বর্তমান পরিবেশে নির্বাচন কমিশন আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন ও তদারকির লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ। তাই দাতা সংস্থাগুলোর সম্মিলিত সিদ্ধান্তে প্রকল্পটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ইউএসএইড তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছিল,
“নির্বাচন কমিশন এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাপ্ত সহায়তাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। তাই এই প্রকল্পে আর কোনো সহায়তা প্রদান নির্বাচন কমিশনের দক্ষতায় অর্থবহ উন্নয়ন আনতে সক্ষম হবে না।”
ডিএফআইডি (DFID) একই সুরে বলেছিল,
“বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান ভবিষ্যৎ নির্বাচনের মানোন্নয়নে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।”
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফরি ফেলটম্যান তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদকে জানান,
“দাতা সংস্থাগুলোর অর্থায়ন প্রত্যাহারের কারণে জাতিসংঘ নির্বাচনী সহায়তা কার্যক্রম ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে বন্ধ করা হচ্ছে।”
বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা
এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক ও লজ্জার অধ্যায়। দাতা সংস্থাগুলো সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা এবং সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সহায়তা প্রত্যাহার করেছিল।
এমন পরিস্থিতি একদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে, অন্যদিকে দেশের গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা দুর্বল করে। যদিও অতীতের এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল, বর্তমানেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম একই ধরনের সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা ও আস্থা অর্জনের জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণের অধিকার এবং গণতন্ত্রকে গুরুত্ব না দেয়, তাহলে বৈদেশিক সহায়তা ও সমর্থন ফিরে পাওয়া কঠিন হবে।