মানবিকতা আর ন্যায়বিচারের কণ্ঠস্বর হয়ে সৌদি আরব এবার সরাসরি প্রত্যাখ্যান করল ফিলিস্তিনিদের নিজভূমি থেকে উচ্ছেদের প্রস্তাব। এমন স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করল দেশটি।
তুরস্কের আন্তালিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, “যুদ্ধবিরতির সঙ্গে গাজার জনগণের ন্যূনতম জীবনধারার অধিকারকে এক করে দেখা যাবে না।”
তিনি বলেন, গাজার মানুষ আজ খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। এই অবরুদ্ধ জনপদে যেন নির্বিঘ্নে পণ্য প্রবেশ করতে পারে, সেই দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিতে হবে।
তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল, সহিংসতা বন্ধ না হলে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
আস্থা এবং প্রত্যাখ্যান—দুইয়ের মিলন
প্রিন্স ফয়সাল কূটনৈতিক ভারসাম্যের পরিচয় দিয়ে জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সৌদি আরবের আস্থা রয়েছে। তবে একইসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার কোনো পদক্ষেপ সৌদি আরব গ্রহণ করবে না।
এই বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্যান্য দেশগুলোর মন্ত্রীরাও একমত হন এই বিষয়ে। তারা সবাই সম্মিলিতভাবে জানান, গাজা, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিমতীর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তাঁরা আহ্বান জানান, এসব অঞ্চলকে একীভূত করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি অথরিটির অধীনে আনার।
বিপর্যয়ের পরিসংখ্যান—এক বেদনার খতিয়ান
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ হাজার ৮০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের দাবি—এই সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে, এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া অনেককে মৃত ধরে নেওয়া হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির ভাঙা স্বপ্ন
চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বল্পকালীন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মাত্র দুই মাস পরেই তা ভেঙে যায়। ১৯ মার্চ থেকে ফের শুরু হয় ইসরায়েলি হামলা, যা এখনও চলমান। কাতার ও মিশর শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবে কোনো দীর্ঘস্থায়ী ফল আনতে পারেনি।
শেষ কথা
সৌদি আরবের এই অবস্থান শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং এক নৈতিক অবস্থান**—যেখানে মানবতা, ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা স্পষ্ট। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে, যেখানে বিশ্ব নানা সংকটে জর্জরিত, সেখানে ফিলিস্তিন প্রশ্নে সৌদির এই স্পষ্ট ও শক্ত অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারে।