রোবটিক্সে বিপ্লবের পথে বাংলাদেশ: প্রযুক্তির নতুন দিগন্তে অগ্রসর
আগামী সকাল,
২৫ অক্টোবর ২০২৪: বাংলাদেশে প্রযুক্তি খাতে দ্রুত পরিবর্তন ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় রোবটিক্সে নতুন বিপ্লব শুরু হয়েছে। রোবটিক্স গবেষণা, শিক্ষা, এবং উৎপাদন খাতে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তরুণ উদ্ভাবকেরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যা দেশকে আধুনিক প্রযুক্তির দুনিয়ায় একটি নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, কৃষি এবং গৃহস্থালি পর্যায়ে রোবটিক্সের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করছে।
রোবটিক্স গবেষণায় দেশের অগ্রগতি
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে রোবটিক্স গবেষণা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে রোবটিক্স নিয়ে গবেষণা ও নতুন উদ্ভাবনের কাজ চলছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন একটি রোবট তৈরি করেছে, যা দূর থেকে কন্ট্রোল করে বিভিন্ন বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করতে পারে। এটি বিশেষত স্বাস্থ্যসেবা এবং দুর্যোগ পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
বুয়েটের রোবটিক্স ও ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাসানুল করিম বলেন, “বাংলাদেশে রোবটিক্স গবেষণার আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে এবং আমরা লক্ষ্য করছি নতুন উদ্ভাবনের পথে তরুণেরা এগিয়ে আসছে। আমাদের গবেষণাগারে শিক্ষার্থীরা যেসব প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে, সেগুলো শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিচ্ছে।”
শিল্পখাতে রোবটের ব্যবহার বৃদ্ধি
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে এখন রোবটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে উৎপাদন কাজে রোবট ব্যবহার শুরু করেছে, যা কাজের গতি ও সঠিকতা নিশ্চিত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোবটের ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কমছে এবং শ্রমের সুরক্ষাও বাড়ছে।
বড় রপ্তানি প্রতিষ্ঠানগুলোর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, “রোবটিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনে মান বজায় রাখা সহজ হয়েছে এবং সময়ের সাশ্রয়ও হচ্ছে। ফলে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বৈশ্বিক বাজারে সুবিধা এনে দিচ্ছে।”
স্বাস্থ্যসেবায় রোবটিক্সের সম্ভাবনা
স্বাস্থ্যসেবায় রোবটের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশের একাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। দেশের কিছু হাসপাতালে ইতিমধ্যে রোবটিক্স সার্জারি চালু হয়েছে, যা জটিল সার্জারিগুলোকে সহজ করে তুলেছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন এবং কোভিড মহামারির সময় রোবটের ব্যবহার জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিষেবা সরবরাহে ভূমিকা রেখেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তি বিভাগের উপদেষ্টা ড. সাবেরা হোসেন বলেন, “রোবটিক্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের লক্ষ্য রোবটিক্স ব্যবহার করে এমন সব প্রকল্প তৈরি করা, যা সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে।”
কৃষিতে রোবটের ব্যবহার
কৃষিক্ষেত্রে রোবটিক্স প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশের কৃষকদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। দেশে ইতিমধ্যে ড্রোনের মাধ্যমে ফসলের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার বিতরণ, এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছে।
কৃষি গবেষক আনোয়ার হোসেন জানান, “রোবটিক্স এবং ড্রোন প্রযুক্তি কৃষিতে বিপ্লব আনবে। ফসল উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে সঠিক নজরদারি ও ব্যবস্থাপনা করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব।”
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশে রোবটিক্স প্রযুক্তির অগ্রগতির পথে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রোবটিক্স সরঞ্জাম আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় এবং মানসম্মত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অভাব থাকায় অনেক তরুণ প্রতিভা তাদের মেধার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারছে না। তবে সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এবং বেসরকারি সংস্থা এ খাতে আরো বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা একটি রোবটিক্স ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছি, যাতে গবেষণারত শিক্ষার্থীরা, ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগসমূহ আরো উন্নত সাপোর্ট পায়।”
রোবটিক্সে বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী। তাদের মতে, রোবটিক্সে সঠিকভাবে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে দেশটি আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি অঙ্গনে নতুন পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হবে।