আক্কাছ আলী, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:
মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলায় আলু রোপণ মৌসুমে নতুন স্বপ্ন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। প্রতিবছর নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া আলু রোপণ এবার বৃষ্টির পানি জমিতে দীর্ঘদিন থাকায় ১০ দিন দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে এখন জমি প্রস্তুত ও রোপণে পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
খরচ বেড়ে দুশ্চিন্তা
এ বছর বীজ আলুর দাম গতবারের তুলনায় বেশি। বীজ আলুর বস্তা ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা এবং বাক্স আলুর দাম ২৫,০০০ থেকে ৪২,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কানি প্রতি ৩৫,০০০ থেকে ৪৫,০০০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধামারণ গ্রামের কৃষক হাজী আলতাফ শেখ বলেন,
“গত বছর ভালো দাম পেয়েছি বলে এবার বেশি আলু রোপণ করছি। কিন্তু বীজ আলুর সংকট তৈরি করে বেশি দাম নেওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।”
সিরাজদীখান উপজেলার গোবরদী গ্রামের কৃষক হারুন শেখ বলেন,
“বৃষ্টির পানি দেরিতে নামায় জমি প্রস্তুত করতে দেরি হয়েছে। তবে বীজ আলুর বেশি দাম এবং অন্যান্য খরচের চাপেও আমরা আলু রোপণ করছি।”
বাহিরের শ্রমিকদের আগমন
রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলার শ্রমিকরা প্রতিদিন ভোরে হাটবাজারে জড়ো হয়ে জমিতে কাজ শুরু করছেন। দিনাজপুর থেকে আসা শ্রমিক মো. জামাল বলেন,
“আমরা চুক্তি বা দিন হিসেবে মজুরি নিয়ে কাজ করি। রোপণ শেষে আলু তোলার মৌসুমেও আবার আসি।”
লক্ষ্যমাত্রা ও চ্যালেঞ্জ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জের ৬ উপজেলায় ৩৪,৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রয়োজন ৬৯,৩১০ টন বীজ আলু, কিন্তু মজুত রয়েছে ৫৪,৬৭০ টন। ঘাটতির কারণে বীজ আলুর দাম বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন,
“এ বছর আলু রোপণ ১০ দিন দেরিতে শুরু হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ চলছে। আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫ টন, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। আশা করছি, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আলু রোপণ শেষ হবে।”
কৃষকের প্রত্যাশা
সর্বোচ্চ উৎপাদন এবং ন্যায্য দামের প্রত্যাশায় কৃষকেরা এখন জমিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির চাপ পুষিয়ে উঠতে সরকারি সহযোগিতা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানানো হয়েছে।