মুন্সীগঞ্জে ইটভাটায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ,হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য
আক্কাছ আলী
(মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি)
মুন্সীগঞ্জের নদী ঘেষে গজারিয়া, সিরাজদিখান,শ্রীনগর উপজেলা এলাকায় গাদাগাদি করে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। নদীতীর তথা সরকারি জমি দখল করে দেদারসে পোড়ানো হচ্ছে ইট।
মুন্সীগঞ্জ জেলায় নিবন্ধিত ইটভাটার সংখ্যা ৫৩টি। আর সরকারি হিসেবে অবৈধ ইটভাটা ৯টি। তবে বাস্তবে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পরিবেশের তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর ধরে চলছে এসব অনিয়ম। আর ক্রমেই বাড়ছে এর সংখ্যা।
পরিবেশে অধিদফতর জানায়, তাদের কাছ থেকে মোট ৬৬ টি ইট ভাটা ছাত্রপত্র নিয়েছে। এরমধ্যে সিরাজদিখান উপজেলায় ৬২টি, শ্রীনগরে দুটি ও গজারিয়া উপজেলায় দুটি। এর মধ্যে ১৫টি ইটভাটা তাদের ছাড়পত্র নবায়ন করেনি ৷ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে কোনো ইটভাটাকে আর ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না।
সরকারি জমি দখল করে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠছে ইটভাটা। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে এসব ভাটা। আর যে গুলো ছাড়পত্র নিয়েছে সেগুলোও মানছে না শর্ত। এসব ভাটায় হেক্টরের পর হেক্টর জমির টপ সয়েল কেটে আনা হচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি । পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে জীববৈচিত্র্য পড়ছে হুমকিতে।
এই ইটভাটাগুলো বর্ষায় ডুবে যায়, তাই ইট পোড়ানো হয় শুষ্ক মৌসুমে। আর এতে ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ। নিয়মনীতি উপেক্ষা করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
সিরাজদিখান উপজেলার বালুর চর এলাকার বাসিন্দা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, অবৈধ যেসব ইটভাটা রয়েছে এগুলোর জন্য পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। যেমন এইমাত্র আমি হেঁটে আসতে ছিলাম। আসার সময় চোখের মধ্যে ধোঁয়া যাচ্ছে এবং ময়লাগুলো চোখে লাগছে। এর প্রভাবে আমের মৌসুমে আম ধরছে না। এই ইটভাটার কারণে নারিকেল, সুপারি ধরছে না। এই অবৈধ ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে বাচ্চাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মুন্সীগঞ্জ জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ ইট ভাটা সম্পর্কে সরকারীভাবে যে সংখ্যার কথা বলা হয়েছে তার থেকে অনেক গুণ বেশি অবৈধ ইটভাটা এখানে রয়েছে। এখানে জরিপ হওয়া দরকার এবং জরিপের সাথে এটার প্রতিকার খুবই জরুরি প্রয়োজন।
এই ভাটা গুলোতে গাছপালা ও কাঠকলা পোড়ানো হচ্ছে। এতে করে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে। এটা দেখভাল করার মত কেউ নেই। দিনের পর দিন এর সংখ্যা বাড়ছে সঠিক কোনো জরিপ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
পরিবেশ অধিদফতর বলছে, জনবলের অভাব সত্ত্বেও ইটভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের কিছু ইটভাটা রয়েছে অবস্থানগত কারণে আমরা সেগুলো ছাড়পত্র নবায়ন দেখতে পারিনি অথবা অনেকে আছে আবেদন করে নাই। এরকম ইটভাটা থাকলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান করি এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। ইতিমধ্যে আমরা অভিযান শুরু করেছি এবং এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে মাটির পোড়া ইট বন্ধ করে ব্লক ইট ব্যবহারের দিকে যাওয়া। সেজন্য আমরা ইটভাটা মালিকদের কে উৎসাহিত করছি।’
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে- চলতি ডিসেম্বর মাসে সিরাজদিখান, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলায পাঁচ ইটভাটায় একযোগে অভিযান পরিচালনা করে সাড়ে ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।