মোঃ নুরুল হক মোরশেদ,
গত বছরের তুলনায় এবার রমজানে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, চিনি, খেজুর, ডিম, মুরগির মাংস, সবজি ও মাছের দাম ভোক্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে। তবে সয়াবিন তেল ও চালের দাম বেড়েছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য কিছুটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালে রোজার শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকায়, যা এবার ৪০ থেকে ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ, পেঁয়াজের দাম প্রায় ৫৪ শতাংশ কমেছে। এছাড়া, গত বছরের ১৫০ টাকার চিনি এখন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির ডিমের দামও কিছুটা কমেছে, যেখানে গত বছর প্রতি হালি ৪৩-৪৫ টাকা ছিল, এবার তা ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
মাংস ও মাছের বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় এসেছে, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকার বদলে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর সোনালি কক ২৮০ টাকার পরিবর্তে ২৫০-২৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশি মুরগি ও হাঁসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গরুর মাংস গত বছর ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার ৭৫০-৭৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খাসির মাংসের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ১১৫০ টাকা হয়েছে।
মাছের বাজারেও কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। তেলাপিয়া ২০০, পাঙাশ ২২০, রুই ২৮০-৫০০, কাতল ৩০০-৭০০, পাবদা ৪০০, বোয়াল ৫৫০-১০০০, দেশি টেংরা ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।
খেজুর ও ফলের বাজারে স্বস্তি
রমজানে রোজাদারদের প্রধান খাদ্য খেজুরের দামও কমেছে। সরকারের করহার কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ জাতের খেজুর ২৫০-২৮০ টাকার পরিবর্তে এবার ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে উচ্চমানের মিদজুল, আজওয়া ও মরিয়ম জাতের খেজুরের দাম এখনও চড়া।
শসা, লেবু, বেগুন, গাজরসহ অন্যান্য সবজির দামও গত বছরের তুলনায় কম। গত বছর ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শসা এবার ৫০-৮০ টাকায় নেমে এসেছে।
সয়াবিন তেল ও চালের বাজার অস্থির
এ বছর বাজারে সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে সয়াবিন তেলে। বোতলের তেল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, ফলে খোলা তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। চালের দামও বাড়তির দিকে, বিশেষ করে মিনিকেট চাল ৭৯-৮৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাজার তদারকির প্রয়োজনীয়তা
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেশি রাখা হচ্ছে। রোজার প্রথমদিকে চাহিদার বাড়তি সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা করছেন। তবে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম ও ভোক্তা অধিদপ্তরের তদারকির কারণে এবার রমজানে বাজার অনেকটাই সহনীয় রয়েছে।
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মতে, যদি বাজার তদারকি আরও কঠোর করা হয়, তবে সয়াবিন তেল ও চালের দামও নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে, ফলে পুরো রমজানে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।