পরিচয়
শরিফুল হক ডালিম (জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬)যিনি মেজর ডালিম নামে অধিক পরিচিত, হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন স্বৈর রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। শোষক শেখ মুজিব নিহত হবার পর মেজর ডালিম (পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) সেটি বাংলাদেশ বেতারে ঘোষণা দেন।’৭৫ পরবর্তী গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার তাকে বিদেশে বিভিন্ন বাংলাদেশি দূতাবাসে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়।
কর্মজীবন
শরিফুল হক ডালিম প্রথমে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর তিনি বিমান বাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালের শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তাকে সেনাবাহিনীতে পুনঃনিয়োগ করা হয় এবং লে. কর্ণেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ১৯৭৬ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত হবার পর গণচীনে তাকে কূটনীতিক হিসাবে প্রেরণ করা হয়। ১৯৮০ সালে তিনি লন্ডন হাই কমিশনের সাথে যুক্ত হন। ১৯৮২ সালে কমিশনার হিসাবে হংকং-এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রদূত হিসাবে কেনিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তাকে তানজানিয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। ইউনেপ (UNEP) এবং হেবিটাট (HABITAT) এ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সোমালিয়ায় যুদ্ধকালীন সময়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর অংশ হিসাবে প্রেরিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের বিশেষ দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তানে (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান) ছিলেন। ২০শে এপ্রিল ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারত আসেন এবং সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও কৃতিত্বের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। তবে ২০২১ সালের ৬ই জুন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় শরিফুল হক ডালিমসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিল করে।
শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড
১৯৭৫-এ বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সাথে মেজর ডালিম সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান, খন্দকার আবদুর রশিদ ও মেজর ডালিমসহ আরও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ১৯৭৫ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ডালিমকে রাষ্ট্রপতি মুজিবকে হত্যা করতে নেতৃত্ব দিতে বলা হয় তবে ডালিম সেটি করতে অস্বীকার করেন। এরপর তাকে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেনা-অভ্যুত্থান চলাকালে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়। পরে ডালিম বাংলাদেশ বেতারের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং একটি ঘোষণা দেন:
‘‘আমি মেজর ডালিম বলছি, খন্দকার মোশতাক আহমদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করিয়াছে। শেখ মুজিব ও তার খুনী-দুর্নীতিবাজ সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে। এখন থেকে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করা হলো। আপনারা সবাই আমাদের সহযোগিতা করুন। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন, কোনো অসুবিধা আপনাদের হইবে না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ! ’’
২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি, মেজর শরিফুল হক ডালিম প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন ইউটিউব চ্যানেলের একটি লাইভ সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকারে ডালিম তার জীবন, সfমসময়িক রাজনৈতিক বিষয় এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে তার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি উল্লেখ করেন
১. একাত্তরে শহীদের সংখ্যা ৩ লক্ষ, ৩০ লক্ষ্য নয়
২. বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তানিরা মেরে তাদের লাভটা কী? বুদ্ধিজীবীদের কে মেরেছে এটা বুঝতে রকেট সাইন্স লাগে না
৩. শেখ মুজিবকে খুন নয়, ক্রসফায়ার করা হয়েছিল। কারণ সে ভারতের দালাল ছিলো।
৪. আমাকে আর মেজর নুরকে সহ সাতজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমাদের অফার দেয়া হয় বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার অথবা শেখ নাসেরের সাথে ব্যবসা ধরিয়ে দেওয়ার।
৪. মুজিবের মৃত্যুর পর লাখ লাখ মানুষ অন্দরে বন্দরে আনন্দ মিছিল করেছিলো
৫. জিয়াউর রহমান আমাদের সাথে কুরআনের শপথ নিয়ে বলেছিল যে, তিনি আমাদের সাথে কাজ করবেন কিন্তু তার সেই শপথ থেকে সরে এসেছিলেন।
৬. নিম্মির ক্যান্সার ছিলো, তাকে হাউজ অ্যারেস্ট করে রাখা হয়েছিল ১৯৯৬ সাল থেকে। এমনকি খালেদা জিয়াও তাকে পাসপোর্ট দেন নাই।ফলে ক্যান্সারেই মারা যায় ২০০৫ সালে।
৭. জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে রবীন্দ্রনাথের গান বাংলাদেশের উপর ভারতের আধিপত্য। কাজী নজরুল ইসলামের মতো এমন প্রতিভাবান কবি থাকতে কীভাবে একজন ভারতীয় নাগরিকের গানকে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হলো, যা পুরো বিশ্বে নজিরবিহীন।
৮.সো কলড মুক্তিযোদ্ধাদের আড়ালে ছিলো আওয়ামী লীগের দেশকে ভারতের কাছে বেঁচে দেওয়ার একটি প্রজেক্ট।
৯. ভারতের অপছন্দের ব্যক্তি হওয়ায় একাত্তরে জিয়াকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে ইন্ডিয়াতে স্টেশন করে রাখা হয়; কেউ তার কাছে ভীড়তে সাহস করতো না।
১০. জিয়া নিজেকে সরকার প্রধান করে ঘোষণা দেন কিন্তু ইন্ডিয়ার চাপে মুজিবকে প্রধান আবার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।
১১. মুজিব ইংরেজি ভাষাকে এমন এমন ভাবে বিকৃত করে যে ডেভিড ফ্রস্ট কান্না শুরু করে দেয়।
১২. দেশের প্রয়োজনে আমরা আবার যেকোনো ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত। নিজের জন্য কিছুই করিনি। আমি তরুনদের বলতে চাই , তোমাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমরা পিছপা হবো না।