ডিভোর্স বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত প্রচলিত ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের সমাজের দম্পত্তিরা
ছোট খাটো বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে আসে যেটা একদমশেষে গিয়ে ডিভোর্সের মতো শেষ পরিণতি হয়। আজকে
এ বিষয়ে কিছু আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবো।
স্ত্রী ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি শর্ত রয়েছে। বিয়ে নিবন্ধনের সময় নিকাহনামার ১৮ নম্বর কলামে যদি স্ত্রীকে ডিভোর্সের অধিকার দেওয়া থাকে, তবে স্ত্রী ডিভোর্স দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে স্বামীর জন্য যে প্রক্রিয়া বলা হয়েছে, একই বিধান স্ত্রীর জন্যও প্রযোজ্য। তবে ডিভোর্সের অধিকার না দেওয়া থাকলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে আবেদন করে ডিভোর্স দিতে পারবেন।
এছাড়া ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন অনুসারে স্ত্রী আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবেন। আদালত বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রি প্রদান করলে ওই ডিক্রি প্রদানের সাত দিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে পাঠানো হবে। চেয়ারম্যান বা মেয়র যেদিন নোটিশ পাবেন, সেদিন থেকে ঠিক ৯০ দিন পর তালাক চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে। তবে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা থাকলে তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী যদি অন্তঃসত্ত্বা থাকেন, সে ক্ষেত্রে নিয়ম একটু ভিন্নতর। তালাকের নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিন পরও যদি স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা থাকেন, তাহলে যেদিন সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে, সেদিন তালাক কার্যকর হবে। এর আগে নয়। কিন্তু নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিন আগেই যদি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তবে স্বাভাবিক নিয়মে, অর্থাৎ ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।
অপর দিকে মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪–এর ৬ ধারামতে তালাক রেজিস্ট্রি করতে হয়। তালাক প্রদানকারী তালাক রেজিস্ট্রেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট কাজি বরাবর আবেদন করবেন। কাজি নির্ধারিত ফি নিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করবেন এবং ফি ব্যতীত প্রত্যয়িত কপি প্রদান করবেন।
বিয়েসংক্রান্ত অপরাধগুলোর সংজ্ঞা ও দণ্ড সম্পর্কে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪৯৩ থেকে ৪৯৮ ধারা পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ আইনের ৪৯৪ ধারা অনুসারে, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পুনরায় বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই ধারা মোতাবেক, স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পুনরায় বিয়ে করলে তা সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে।
এ অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রতারণাকারী স্বামী বা স্ত্রী সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যদি স্বামী বা স্ত্রী সাত বছর পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকেন এবং জীবিত আছেন মর্মে কোনো তথ্য না পাওয়া যায়—এমন পরিস্থিতিতে পুনরায় বিয়ে করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। এ ছাড়া কোনো স্বামী বর্তমান স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে সালিসি পরিষদের কাছে পুনরায় বিয়ের আবেদন করতে পারেন।
সালিসি পরিষদ তা যাচাই–বাছাই করে বিয়ের অনুমতি দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুনরায় বিয়ে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। আগের বিয়ের কথা গোপন রেখে প্রতারণার মাধ্যমে পুনরায় বিয়ে করলে তা ৪৯৫ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আবার কেউ জেনেশুনে অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করলে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা মোতাবেক সেটি বাতিল হয়ে যাবে।
এ ক্ষেত্রে তা দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা মোতাবেক ব্যভিচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধ প্রমাণিত হলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।
বিয়েসংক্রান্ত অপরাধ ঘটলে সরাসরি আদালতে মামলা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মামলার প্রমাণ হিসেবে বিয়ের কাবিননামা ও অন্যান্য প্রমাণ সঙ্গে জমা দিতে হবে এবং আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে। মামলা চালানোর সামর্থ্য না থাকলে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার বরাবর আবেদন করতে হবে।
অ্যাড. আনোয়ার হোসেন পান্না
আইনজীবি
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত।