নুরুল হক মোরশেদ, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কাকিয়াছড়া চা বাগানে কলেজছাত্র হৃদয় আহমেদের (১৮) নির্মম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত আলামত, মোটরসাইকেল ও ভিকটিমের মোবাইল ফোন।
গত ৭ জুলাই (সোমবার) সকালে শ্রীমঙ্গলের কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া চা বাগান ১ নম্বর সেকশন এলাকায় একটি গাছের নিচে গলায় বেল্ট পেঁচানো অবস্থায় হৃদয়ের মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং শ্রীমঙ্গল থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৪, ধারা ৩০২/২০১/৩৪) রুজু করা হয়।
মামলার তদন্তে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম-সেবা এর নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপস) নোবেল চাকমা এবং সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমানের তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়।
তথ্যপ্রযুক্তি, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এসআই অলক বিহারী গুণ ও এসআই মোঃ মহিবুর রহমানের নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার রাজাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুই আসামি—মোঃ কাজল মিয়া (২০) ও মোঃ সিরাজুল ইসলাম (২১)-কে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, হৃদয়ের মোবাইল ফোন এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিহত হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন কমলগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং শ্রীমঙ্গল কালীঘাট এলাকায় একটি ওয়াইফাই অপারেটরের কাজ করতেন। তিনি অনলাইনে জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল অর্থ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
হৃদয়ের কাছ থেকে প্রায় ২২ হাজার টাকা পাওনা ছিল কাজলের। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ঢাকায় নেওয়ার পর টাকার বিষয় নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়। গত ৬ জুলাই রাতে কাজল ও সিরাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী হৃদয়কে কাকিয়াছড়া চা বাগানে নিয়ে গিয়ে গামছা দিয়ে গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে গাছের সঙ্গে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে তারা হৃদয়ের মোবাইল ফোন মাত্র ২৫০ টাকায় বিক্রি করে এবং মোটরসাইকেল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাপুর গ্রামে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মামলাটি আরও তদন্তাধীন রয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের পেছনের মোটিভ ও সংশ্লিষ্টতা আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে চাঞ্চল্য ও শোকের ছায়া। স্থানীয়দের দাবি, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।